যুগের সাহিত্য


 ❑ বৃহস্পতিবার  ❑ ১৯ জুলাই ২০২৩ ইংরেজি  ❑ ০৫ শ্রাবণ ১৪৩০ বঙ্গাব্দ ❑ ঢাকা।


❑কবিতা

দান প্রত্যাহরণ

আকিব শিকদার 


এই য শুনুন। এক ভিখারি হাত বাড়াতই

দিলাম পাঁচটি টাকা। সবুর তা নই

তার মুখ...!  স চাইলা যন আরও দই

দশ কিংবা পনরা। অমনি কড় নিয়

পাচঁ টাকার নাট রখ দিলাম নিজ-পকটই।

এবং গলাধাক্কা ‘যা ব্যাটা, যা... মন ভর না

সহজ কনা তার! আমার বিশ্বাস রগ গিয়

আপনিও তাই করতন। অকতজ্ঞক কউ দান কর না।


আসল কথায় আসি। বিধাতা যখন

আমাদর দয় কিছু, যমন সুখ-শান্তি-প্রতিপত্তি

অতৃপ্ত অর আরও চাই, আরও খুঁজি। হয়তা তখন

ঘট বিপত্তি। শুনছি সমস্ত প্রাণিকূল

পশু-পাখি-মাছ-গাছ শুকরিয়ায় মশগুল

সামান্য পয়ই; তাই আরও পায়। মানুষরই শুধু

অভাব অভাব স্বভাব। শুকরিয়া নই বল

বিধাতা নারাজ হয় অর্পিত দান পূনরায় নন তুল।


একাকী

সোহাগ রেজা


যদি হঠাৎ অজানা কষ্ট পেয়ে যাও

আলোকিত চোখ আঁধারে ঢাকে

কষ্টগুলো কাউকে বুঝাতে না পার

শ্বাস-প্রশ্বাস দীর্ঘ হয়ে উঠে

তাহলে কী করবে ? 


যদি অদৃশ্য যন্ত্রণাবোধে ভেসে যায় মন

ঝড়ো-মেঘের গর্জনে হৃদয় কাঁপে

অনুভবের দরজায় পড়ে শত আঘাত 

তাহলে কী করবে ? 


যদি কষ্ট রাখার জায়গা খুঁজে না পাও

যদি আগ্রহচিত্তে এগিয়ে আসে কেউ;

জানতে চায় মনের কথা

লাঘব করতে চায় সঞ্চিত ব্যথা

তাহলে কী করবে ? 

নাকি কিছুই করবে ন

চেয়ে থাকবে নীরবে

নীরব দৃষ্টিতে

একাকী !

<script async src="https://pagead2.googlesyndication.com/pagead/js/adsbygoogle.js?client=ca-pub-9382962846681100"

     crossorigin="anonymous"></script>

<ins class="adsbygoogle"

     style="display:block; text-align:center;"

     data-ad-layout="in-article"

     data-ad-format="fluid"

     data-ad-client="ca-pub-9382962846681100"

     data-ad-slot="1566428881"></ins>

<script>

     (adsbygoogle = window.adsbygoogle || []).push({});

</script>

নক্ষত্র উজ্জ্বল

আনজানা ডালিয়া


চোখের তারায় খুঁজি কিছু

খুঁজি চাঁদের উজ্জ্বলতা

কি গো?

তোমার চোখের তারায়

শত সখীর আনাগোনা।

বসতি হলো উচ্ছেদ

প্রেমের হলো নিলাম।

নিঃসীম শূন্যে

চাঁদটা নিজ রূপ হারিয়ে

ঢলে পরে নীল ঢঙ্গে।

অস্তিত্ব গোপন হলেও

নক্ষত্র কিন্তু উজ্জ্বল।



একটি মহতী রাতের গল্প

এবি ছিদ্দিক


এক স্পৃহণীয় রাতের মহতী ক্ষণে—

জলের ভেতর জল হারালো মিশরীয় হুর

হারানো জল...মিশে গেছে রাতের অম্বরে

অবলা ওই হুর...

সুখের কান্না কাঁদলো সন্ধ্যা হতে ভোর !

আজও কাঁদে,হাসে 

সুখে-দুখে ভাসে তার দোর !

সবাই জানে...

জলে জল হারালে খুঁজে পাওয়া যায় না আর!

যেমন বিরহই কোকিলার আজীবন কণ্ঠহার

তবু আছে প্রেম-প্রণয়,ভালোলাগার আবেদন

আছে নির্ভেজাল প্রেমের আকণ্ঠ নিবেদন।



বর্ষা

নুশরাত রুমু 


এসেছে

রিমঝিম বর্ষা

সজীবতার অনন্য ধারা

সূর্যহীন সকালের আলসে যাপনে

সফেদ মেঘের লুকোচুরিতে রংধনু ক্ষণে

কদম -কেয়ার সুবাসিত চিত্রণে বিমূর্ত বাংলা..।


জীবন তৃষ্ণা

রজব বকশী


এবার প্রস্তুত হও

যখন আগুন লেগে গেছে

ঘরে ও বাইরে 

তখন কথায় চিড়ে না ভিজিয়ে এসো

                          নিজেকে দর্শন করি

আর নদীর কলিজা ছিঁড়ে ফেড়ে নয়

এই জীবন তৃষ্ণায় আগুনকে গ্রেফতার করে

ভালোবাসার তুমুল বৃষ্টিতে ভিজিয়ে 

উত্তাপ নিভিয়ে দিতে একজোট হই

অন্ধকারের জরায়ু ছিঁড়ে আলোফুল

ফুটিয়ে তুলতে হবে

                আমাদের কথা দিয়েছিলে

আগুন জলের থেকে শান্তিছায়া এনে সুবাতাস বয়ে দেবে 

আর পাতার আড়ালে পাতাকীট যেখানেই লুকিয়ে থাক না

কিছুতেই শেকড়ের দৃষ্টি এড়ানো সম্ভব নয় 


 তুমি আছো

কাজী নাজরিন 


তুমিতো আছো নয়নে নয়নে 

তুমি আছো হৃদে হৃদে,

তুমিতো আছো শয়নে স্বপনে 

তুমি আছো ধ্যানে জ্ঞানে।

তুমিতো আছো হৃদ মাজারে 

তুমি আছো মন মন্দিরে, 

তুমিতো আছো আমার আকাশে 

তুমি আছো শুভ্র রজনী হয়ে।

তুমিতো আছো দেয়াল হয়ে

তুমি আছো আমার সবখানে,

তুমিতো আছো রুপোলী চাঁদে

তুমি আছো সবুজ উদ্যানে। 

তুমিতো আছো গান কবিতায় 

তুমি আছো ছন্দে তালে,

তুমিতো আছো ছায়ার মতো 

তুমি আছো মায়াবী রাতে।


আহত অনুভূতি

মোঃ মামুন মোল্যা


শ্রাবণের বিকালে কদম ফুলের আগমনে,

হয়তো বা তুমি ছুটে এসেছিলে;

হেটে ছিলে তুমি নদীর কূল ঘেঁষে ঘেঁষে

গুন গুন করে গেয়ে ছিলে ফাগুনের গান

চোখে মুখে প্রীতির ঘন কালো মেঘ

ঝরছে ঘন বরষায় ছুটেছে চোখে মুখে

চোখে মুখে ঘুম,কেড়ে নিছে একটু তে;

সমুদ্রে নেমেছি গভীরতা মাপতে দম যায় যায়।

 এক নজর চেয়ে ছিল মায়ার দৃষ্টিতে

 এক ঝলক হেসে ছিল কৃষ্ণচূড়ার হাসি

ধীরে ধীরে চলেছে চোখে দেখি ঝাপসা

কোটি কোটি চোখে পড়ে তারা আর তারা

 চাঁদ আড়ালে যেতে আহত গভীর অনুভূতি ।


 একটি লাশের গল্প

শুভজ্যোতি মন্ডল মানিক


শিয়রে মৃত ভবিষ্যৎ,নিথর প্রাণ বায়ু বিষাদ কোলাহল;চারপাশে আত্মীয় স্বজন হাজারো লোকের ভিড়;সবাই আছে;নেই শুধু প্রিয় মানুষটি যার পথপানে পাথর দু'টি চোখ প্রতীক্ষিত।


নিষ্প্রাণ স্পন্দন,ঠিক বুকের বাম পাশে চামড়া অস্থির মলাটে আবৃত চোরা ক্ষত;জোড়া অক্ষি কোটরে ভাঙা স্বপ্নের জড়ো স্তুপ;কি অদ্ভুত!

লাশের চোখে হাজারো স্বপ্নের ভূত।


যমদূত প্রস্তুত,হৃদয় পোড়া অনলে প্রতিদিন সৎকার;অনন্তকালের লাশসারা শরীরে দাগ আর দাগ;বক্ষপিঞ্জরেজীবন্ত মানসীর উজ্জ্বল প্রতিচ্ছবি;

একটি লাশের গল্পে প্রেম পরাজিত।


একটা তুমি চাই

সোলায়মান জয়


আমার শহরে নদীর জলে ঢেউ খেলে জোছনা

আকাশে আকাশে মেঘের ডানায় স্বপ্ন উড়ে

বাতাসে বাতাসে রজনীগন্ধার তীব্র সুঘ্রাণ

বাতাবিলেবুর পাতায় সুগন্ধি জড়িয়ে রাখে সন্ধ্যা

পাখির ঠোঁটে ঠোঁটে প্রেমময় গান

আর তুমি।


এমন একটি শহরে যেতে চাই সব কোলাহল ছেড়ে

প্র‍য়োজন হলে ছেড়ে দিব সকল দিনের হিসেব

তোমার ছায়ায় ছায়া মিশিয়ে হেঁটে বেড়াব তপ্ত দুপুর

ঘাসের কপাল ছুয়ে হারিয়ে যাব কোন অজানায়

শুধু তুমি চাই। একটা তুমি চাই।


❑ ছড়া


কদম ফুল

শাহীন খান 


বৃষ্টি এলে কদম ফুলের মুখে ঝরে হাসি

হৃদের ভেতর বেজে চলে মধুময় এক বাঁশি। 

দুলতে থাকে দুদোল দুলোল মন হয়ে যায় উদাস

দারুণ লাগে কি যে আহা ছড়ায় সুখের সুবাস। 

কবির মনে ছন্দ আসে দেখে ফুলের রূপ যে

ইচ্ছে করে সেই না রূপে দিই আমি হায় ডুব যে। 


 ❑

বাদলা দিনে

শাহ আলম বিল্লাল


রিনিঝিনি বৃষ্টি পড়ে

সকাল দুপুর সাঝে

বৃষ্টি জলে হয় একাকার

রৌদ্র লুকায় লাজে।


ঘর থেকে বের যায়না হওয়া

হাঁটু সমান জলে

বর্ষা এলে বাড়ে পানি

হাসে কল কলে।


ডোবা নালায় ব্যাঙ ডাকে

টাপুর টুপুর বৃষ্টি

বাদলা দিনে ঘরের কোণে

হয় কোলাহল সৃষ্টি।



রিমঝিম বৃষ্টি

মোঃ শরীফ উদ্দিন


টুপ টপাটপ বৃষ্টি নিয়ে 

বর্ষা এলো তটে,

তরুশাখে ফুটেছে ফুল 

মেলছে পাতা বটে।


রিম ঝিম ঝিম নীলিমার রঙ

মেঘ-মাদুলি বাঁকে, 

গুড়ুম গুড়ুম নীল আকাশে 

দিন দুপুরে ডাকে।


ব্যাঙে ডাকে ঘ্যাঙর ঘ্যাঙর

ডোবা পুকুর জলে,

বাদলধারায় চারিদিকে 

মাছ উঠেছে স্থলে। 


খরায় পুড়া প্রকৃতি আজ 

কেড়ে নিচ্ছে দৃষ্টি, 

মেলছে ডানা পাখপাখালি

পেয়ে রাঙা কৃষ্টি। 


ঝিলমিল ঝিলমিল কদমতলে 

আমার সবুজ দেশে,

আমন আউশ পাবে আশায়

চাষা ভিজছে হেসে।



বৃষ্টি সুমধুর 

মাহবুব-এ-খোদা 


বৃষ্টি পড়ে কালোমেঘে

হৃদে জাগে সুখ, 

পানির ফোটায় উর্বর ভূমি

গর্বে ভরে বুক। 

বৃষ্টি পড়ে খালে-বিলে

ফোটে শাপলা ফুল, 

নয়াজলের টেংরা পুঁটি 

হয় না যে তার তুল।

বৃষ্টি পড়ে বনবাদাড়ে 

শেয়ালমামা চুপ,

ভালো লাগে কোলাব্যাঙের

গালফুলানো রূপ। 

বৃষ্টি পড়ে রাস্তাঘাটে 

কাদাতে ভরপুর, 

বৃষ্টি নিয়ে গান-কবিতা 

বৃষ্টি সুমধুর। 


মেঘ বালিকা

নাদিরা বেগম


ওগো শ্রাবণের মেঘ বালিকা

যাচ্ছ কোথায় উড়ে ,উড়ে? 

সারা আকাশ জুড়ে

শ্রাবণ মাস এলে কেনো 

থাকো মুখ গোমড়া করে ?


আকাশ ভরা শোকের ছায়া

চোখে তোমার জলের মায়া

সঙ্গী তোমার পাগলা হাওয়া

বিদ্যুতের চমকিত ধাওয়া । 


আষাঢ়ে  বৃষ্টির জোয়ারের জলে

 শাপলা শালুক পাপড়ি খোলে

কদম কেতকি জুঁই চামেলী

বনে বনে হাসে খিলখিলিয়ে । 


বর্ষণ মুখোর সন্ধা বেলা

হাতে হাতে ফুলের ডালা

খোঁপায় বেলী ফুলের  মালা

বর্ষা বরণ উৎসবে মাতোয়ারা।



বর্ষা

ইলিয়াছ হোসেন


গ্রীষ্মের তাপদাহ দূর করতে

বর্ষা আসে দেশে,

আমজনতা বর্ষার স্পর্শে

হর্ষে ওঠে হেসে।


আকাশের ঘন কালো মেঘ

বৃষ্টি হয়ে ঝরে,

মুষল বৃষ্টির অঝর ধারায়

থাকতে হয় ঘরে।


বৃষ্টির কারণে দেহের তাপ

দূরে যায় সরে,

রিমঝিম রিমঝিম বৃষ্টির ধ্বনি

মন আকৃষ্ট করে।


জীবন ফিরে পায় প্রকৃতি

জলে ভরে মাঠ ঘাট,

গাঁয়ের কৃষক মনের হর্ষে

ঘরে তোলে ধান পাট।


গাছের ডালে জুঁই কামিনী

কদম কেয়া ফোটে,

মেঘের ফাঁকে দিবাকরে

ঝিলিক দিয়ে ওঠে।


আষাঢ় মাসে

নূর মোহাম্মদ 


আষাঢ় মাসে ভরা বৃষ্টি 

জমছে পানি মাঠে

টইটম্বুর সবখানেই 

উছলে পরে ঘাটে।


খালে পানি ডোবায় পানি

নদী নালায় পানি

বর্ষাকালে মধ্যেবিত্ব

টানে ভীষণ ঘানি। 


গরু কান্দে গোয়াল ঘরে 

হাম্বা হাম্বা করে

এই সুযোগে করিম চাচা

জাল দিয়ে মাছ ধরে।


শাঁখে শাঁখে পাখপাখালি 

লাফায় গাছে গাছে

আনন্দেতে  লাফালাফি 

করে এরই ফাঁকে। 


কদম ফুটে ডালে ডালে

পুষ্প ভরা শাঁখে

নৌকা চলে ছলাৎ ছলাৎ 

ভরা নদীর বাঁকে।


বর্ষার রূপ 

কাজী আলম ভূঁঞা


বর্ষাকালে রূপ ফিরে পায় 

সৌন্দর্য্য হয় নদী 

খাল বিল ভরে যায়

বৃষ্টি আসে যদি।


জ্যৈষ্ঠ শেষে আষাঢ় মাসে

বর্ষা শুরু দেশে

নতুন রুপে নতুন সাজে

ঋতুর রানীর বেশে। 


নদী নালা খাল বিল 

ভরা যৌবন পায়

বর যাত্রীরা নৌকায় চড়ে 

আনন্দে গান গায়।


কদম ফুল ও কৃষ্ণ-চূড়া 

ফুটিয়ে তুলে গাছ 

নয়া পানিতে উজিয়ে ওঠে 

হরেক রকম মাছ।


মাছে ভাতে বাঙালি

বর্ষাকালে বুঝি 

দেশি মাছের স্বাদ পেয়ে 

সারা বছর খুঁজি।




❑গল্প


মা-হারা সন্তান 

মাওলানা তাজুল ইসলাম নাহীদ


শাকিল তার মায়ের খুবই ভক্ত 

ছেলে। দুখিনীর মায়ের ছোট খাটো একটা কিচ্ছু হলেই অস্থির হয়ে যায় সে। ছোট্টবেলায় মা যেমনভাবে ওর একটি কিছু হলে অস্থির হয়ে যেত,ঠিক তেমনি সে ও যেনো মায়ের সামান্য কিচ্ছু হলে অস্থির হয়ে যায়। তিলে তিলে গড়ে উঠা বালক শাকিল এখন মাশাআল্লাহ্ উনিষ বিশ বছর বয়সে পৌঁছেছে। গ্রামের স্কুলসহ আর মাদ্রাসায় কয়েক বছর লেখাপড়া করে এখন বিদেশ চলে যাবে বলে ঠিক করেছে। সে চায় বিদেশ পাড়ি দিয়ে তার বাবা মায়ের কষ্টটা একটু দূর করতে। কারণ তার চোখের সামনে দুখীনী মা আর বাবার বহু কষ্ট দেখেছে সে। এখন চাচ্ছে বিদেশ গিয়ে একটু কষ্ট বেশি করে হলেও তাদের একটু সুখ শান্তিতে রাখতে। যেই ভাবনা সেই কাজ। অনেক কষ্টে আত্মীয়স্বজনদের কাছ থেকে টাকা ধার করে চলে গেল দুবাইতে। নেমে গেলো এবার জীবন যুদ্ধে। দিন যায় রাত আসে মাস পেরিয়ে মাস আসে। এভাবেই চলছিলো তার জীবন। যতটুকু কামাই করে তার সবগুলো টাকা-ই বাড়িতে দিয়ে দিত বাবা মায়ের মুখে একটুখানি হাসি দেখার জন্য।এভাবে চলেগেল দুটি বছর।

আল্লাহর রহমতে মোটামুটি ভালোই চলছিল তাদের সংসার। বদলে গিয়েছিল দুঃখ কষ্টের দিন।

দুঃখ কাটিয়ে সুখের আলো দেখতে না দেখতেই তার জীবনে নেমে এলো এক বিরাট বড় অন্ধকার।

সেটি হলো তার জনম দুখীনী মায়ের হঠাৎ অসুস্থ হয়ে যাওয়া। সে অসুস্থতা ভালো না হওয়ায় বহু পরিক্ষা নিরীক্ষা পর পরবর্তীতে জানতে পারলো তার মায়ের কেন্সার হয়েছে। খবরটি শুনে যেনো আসমান ভেঙে মাথায় পড়েছে। কি থেকে কি হয়ে গেলো। নেমে এলো তাদের পুরো পরিবারে বিরাট বড় একটি ঝড়। জীবনের সমস্ত স্বপ্ন যেনো এক নিমিষেই ধুলিসাৎ হয়েগেল তাদের। কারণ আমরা সবাই জানি কেন্সার রোগের কোনো আনসার তথা শেফা নাই। কেন্সার মানেই মৃত্যু সুনিশ্চিত। ঢাকার বড় বড় কয়েকজন ডাক্তারকে দেখানো হল সবাই একই কথা বললো বাঁচানো অসম্ভব। বড়জোর এক মাস বাঁচতে পারে। এরই মধ্যে চলে এসেছে শাকিলের বড় ভাই কাউসারের দুবাই যাওয়ার ভিসা। তারা চাচ্ছিল দু ভাই মিলে দিন রাত পরিশ্রম করে সংসারটা একটু সুন্দর করে সাজাতে। তা আর হলো কই? একদিকে মায়ের কেন্সার অন্যদিকে বড় ভায়ের ভিসা চলে আসায় দ্রুত চলে যেতে হবে বলে টিকেট ও কাটা হয়ে গেছিল এমতাবস্থায় এখন কি করবে। কোনো কিছু যে ভেবে পাচ্ছে না ওরা। ওর বড় ভাই যদি এই মূহুর্তে বিদেশ চলে যায় তাহলে মায়ের চিকিৎসা করানোর মত কেউ থাকবে না

ওরা দুই ভাই দুই বোন। বোন দুটি  র ও বিয়ে হয়ে গেছে। দুজনের দুটি করে বাচ্চা ও আছে আলহামদুলিল্লাহ্। ওরা তো আর স্বামীর সংসার রেখে মায়ের সঙ্গে হাসপাতালে সপ্তার পর সপ্তাহ থাকা সম্ভব নয়। তবুও বড় বোনটি যতেষ্ঠ সময় দিয়েছে মায়ের সেবায়। কিন্তু একটি মেয়ে মানুষতো আর  একা একা সেই প্রতন্ত পল্লী গ্রাম থেকে সেই সুদূর ঢাকায় একা একা মা কে নিয়ে যেতে পারবে না। অবশ্যই সঙ্গে একজন শক্তিশালী শিক্ষিত পুরুষ প্রয়োজন যে জানে ঢাকার হালচাল বুঝে। বাবা বেঁচে থাকলেও উনি তো আর ঢাকার হাল অবস্থা সম্পর্কে  বা ডাক্তার সম্পর্কে তেমন একটা বুঝে না। তাই সিদ্ধান্ত হলো শাকিলের বড় ভাই কাউসারের ভিসা টিকেট বাতিল করে মায়ের চিকিৎসা চালিয়ে যাওয়া। তাতে যদিও সাড়ে তিন লক্ষ টাকার মত ক্ষতি হবে হলে হোক তবুও মায়ের চিকিৎসার জন্য বিদেশ যাওয়া বাতিল করতে হবে। অবশেষে তাই করা হলো। ভাগ্যের কি নির্মম পরিহাস টিকেট কাটার পর ও বিদেশ আর যাওয়া হলো না।ক্যান্সারের সমাধান নেই জেনেও একজন ডাক্তারের পক্ষ থেকে ভালো হতে পারে এমন খবরে আশাবাদী হয়ে অপারেশন করানোর সিদ্ধান্ত নেয়। আল্লাহর উপর ভরসা ও জীবনের রিস্ক নিয়ে অপারেশন করে ফেলে। তাতে আগের পরের সব মিলিয়ে তিন চার লক্ষ টাকার মত খরচ হয় তাদের। যাক হলে হোক তবুও যেনো মা তাদের সুস্থ হয়।

আলহামদুলিল্লাহ্ খোদার দয়ায় এই অপারেশনের পর এক বছর চার মাস সম্পূর্ণ সুস্থ থাকলেও

এ বছর বিশ রমজান থেকে আবারো অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি। সঙ্গে সঙ্গে ঢাকার সেই ডাক্তার কাছে নিয়ে যায় উনাকে। যার কাছে অপারেশন করানো হয়ে ছিলো। তিনি দেখে বললেন না তেমন বড় ধরনের কোনো সমস্যা তো দেখছি না। ডাক্তার সাব কিছু ঔষধ দিয়ে তাদের বাড়িতে পাঠিয়ে দিলো। কিন্তু এই ঔষধে তো রোগের পরিবর্তন হচ্ছে না। নিরুপায় হয়ে আবারো গেলো ঢাকায়। ভালো চিকিৎসার জন্য ভর্তি করানো হলো। সাতদিন চিকিৎসার পর ছুটি দেওয়া হলো। কিন্তু শাকিলের বড় ভাই কাউসার বললো না,আরো দু দিন চিকিৎসা চলুক তারপর আমরা রিলিজ নেবো। তবুও যেনো মায় পুরোপুরি সুস্থ হয়ে যায়। তাই করা হলো। চিকিৎসা শেষে বাড়ি যাওয়ার পরও রোগীর অবস্থা সেই ঠিক  আগের মতই। কোন উন্নতি হচ্ছিল না। এরই মধ্যে আরো বিভিন্ন ডাক্তার কবিরাজ হোমিওপ্যাথিকসহ সকল ব‍্যবস্থাই গ্রহণ করা হলো। কিন্তু ফলাফল শূণ্য। পরিশেষে আবারো ঢাকায় নিয়ে যাওয়া হলো। বহু পরিক্ষা নিরীক্ষার পর রোগ ধরা পড়ল খাদ্যনালীতে বাঁধ পড়ে আছে। যেই কারণে খাবার ভেতরে যাচ্ছে না। এখন অপারেশন করলে সবকিছু ঠিক হয়ে যাবে। অপারেশন করানোর জন্য রক্ত এবং টাকা পয়সা যোগার করা হলো। অপারেশন কক্ষে ও নেওয়া হলো। এই মূহুর্তে অজ্ঞান বিশেজ্ঞ ডাক্তার রোগীর রিপোর্ট দেখে বললো কোনোভাবেই এখন অপারেশন চলবে না। কারণ রোগী খুব বেশি দূর্বল।

পর পর তিনজন ডাক্তারের কাছে গেলে সবাই একই কথা বললো যে এই মূহুর্তে অপারেশন করলে জ্ঞান ফেরার সম্ভবই না নেই।

অর্থাৎ অপারেশনেই মারা যাবে।

আপনাদের লক্ষ লক্ষ টাকা ও যাবে রোগী মারা যাবে।

তারচেয়ে বাড়িতে নিয়ে যান ভালো হবে।

পরিশেষে কাঁদতে কাঁদতে নিরুপায় হয়ে বাড়িতে নিয়ে আসলো। 

হুজুরদের দিয়ে দোয়া দুরূদ ও পড়ানো হলো।

কিন্তু কোন উন্নতি আর হলো না।

হয়তো হায়াত তার শেষ, যার কারণে সুস্থ হয়নি।


ঢাকা থেকে ফেরত আসার প্রায় বিশদিন পর জুলাই মাসের এক তারিখ রোজ শনিবার 

সকাল এরোটার সময়।

আমাদেরকে কাঁদিয়ে রবের দরবারে চলে যান তিনি।


মৃত্যু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে উনার ছেলেমেয়ের কান্নায় আকাশ বাতাশ যেনো ভারী হয়ে আসছিল। 

হায়রে কান্নাকাটি! কে দেখে দুখীনী মায়ের জন্য কান্নাকাটির দৃশ্য। এমন একটি মানুষও বাকি ছিলো না,যারা তাদের কান্না দেখে চোখের অশ্রু ছাড়েনি।


মা যে তাদের চলে গেলো

রেখে বাড়িঘর,

ছেলেমেয়ে স্বামী রেখে

সবকে করে পর্।


<script async src="https://pagead2.googlesyndication.com/pagead/js/adsbygoogle.js?client=ca-pub-9382962846681100"

     crossorigin="anonymous"></script>

<ins class="adsbygoogle"

     style="display:block; text-align:center;"

     data-ad-layout="in-article"

     data-ad-format="fluid"

     data-ad-client="ca-pub-9382962846681100"

     data-ad-slot="1566428881"></ins>

<script>

     (adsbygoogle = window.adsbygoogle || []).push({});

</script>


<script async src="https://pagead2.googlesyndication.com/pagead/js/adsbygoogle.js?client=ca-pub-9382962846681100"

     crossorigin="anonymous"></script>

<ins class="adsbygoogle"

     style="display:block; text-align:center;"

     data-ad-layout="in-article"

     data-ad-format="fluid"

     data-ad-client="ca-pub-9382962846681100"

     data-ad-slot="1566428881"></ins>

<script>

     (adsbygoogle = window.adsbygoogle || []).push({});

</script>

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)
নবীনতর পূর্বতন

তানকা/স্বপন শর্মা