❑ শনিবার ❑ ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ইংরেজি ❑ ০৮ আশ্বিন ১৪৩০ বঙ্গাব্দ ❑ উলিপুর-কুড়িগ্রাম।
❑
নষ্ট সুখের ভ্রষ্ট পাথর
মমতা মজুমদার
এখন সময় নষ্ট ভীষণ
নষ্ট ব্যথার কষ্ট ভীষণ
কষ্ট বুকের ভাঁজে,
নষ্ট সুখের ভ্রষ্ট পাথর
সৃষ্ট দুঃখে দৃষ্ট কাতর
পুড়ে ব্যথার খাঁজে!
এখন জীবন চক্রাকারে
ঘুরছে ভীষণ বক্রাকারে
নষ্ট ব্যথার মাঝ,
কষ্টগুলো তুষ্ট পায় না
নষ্টালজিক ব্যথা সয়না
জীবন স্রোতে বাজ।
এখন কত কষ্টে কাটে
নষ্ট জীবন মুষ্টি চাটে
সৃষ্ট চাপের খেই;
পিষ্ট হতে ব্যথায় কাঁদে
রিষ্ট লোকের কথা বাদে
কষ্টে ডুব দেই।
এখন জীবন অতিষ্ঠ প্রায়
নষ্ট কথার জখম কি যায়
সৃষ্টি দুঃখের লাগি;
কষ্ট কষ্ট খেলার তিয়াস
নষ্ট ব্যথায় মিটে পিয়াস
তপ্ত দুচোখ জাগি।
❑
আমার ভালোবাসা
বাপী নাগ
ভালোবাসা সুখের ঘর ছেড়ে
চলে গিয়ে, দিও না ফাঁকি।
যেওনা তুমি সরে অনেক দূরে
আছে কথা বলার বাকি।
আমাদের জীবনের চলার পথ
এখনো আছে অনেক বাকি।
নিয়েছিলাম দুজনে শপথ
সুখের সংসারে কষ্টের উঁকি।
কখনো তুমি অভিমান করে
যেওনা আমার থেকে সরে।
লিখেছি তোমার নাম অন্তরে
আমার মনের মতন করে।
যদিও কখনো ভুল করে থাকি
কষ্ট করে মানিয়ে নিও তুমি।
দিওনা তবুও আমায় ফাঁকি
তোমার হয়ে থাকবো আমি।
তোমার আমার ভালোবাসা
যেও না তুমি আমায় ভুলে।
দূরে না থেকে কাছে আসা
ভালোবেসে কাছে ছিলে।
যেওনা কখনো ভুলে আমায়
থাকবো মোরা একসাথে।
বাসবো ভালো আমি তোমায়
সুখ দুঃখের মালা গেঁথে।
❑
হৈ-হুল্লোড় আর কোলাহলে
গোলাপ মাহমুদ সৌরভ
যদি আবার আমি ফিরে পেতাম সেই শৈশব
বৃষ্টির দিনে ঝরে পড়া পাখির ছানা কুড়ানো
কলাপাতার ছাতা বানিয়ে আম কুড়ানোর সুখ
বৃষ্টির জলে উঠোনে কাদামাটি মাখা সেই মুখ।
স্নিগ্ধ দুপুরে এসে পুকুরে ঘণ্টাখানেক ডুবানো
ডিঙি নৌকা চড়ে বিলে সাদা শাপলা উঠানো
আম,জাম,পেয়ারা খেতে গাছের ডালে চড়ে
সারাদিন ঘুরেফিরে সন্ধ্যা বেলা চুপচাপ ঘরে।
ক্লাসের পড়া শিখি নাই বলে দিতাম স্কুল ফাঁকি
পাড়ার দোকানে বসে খেতাম কতো কী বাকী,
বিকেল বেলা খেলার মাঠে বন্ধুদের নিতাম ডাকি
পাড়ার ছেলে মোরা ভাই বন্ধু মিলেমিশে থাকি।
শীতের সকালে উঠে মাঠে এসে গোল্লাছুট খেলা
সারাদিন হৈ-হুল্লোড় আর কোলাহলে যেতো বেলা
রোদে পুড়ে গোয়াল ফড়িং আর প্রজাপতি ধরে
মায়ের আঁচলে লুকাইতাম বাবা-র শাসনের ঢরে।
❑
জীবনের পাণ্ডুলিপি
নবী হোসেন নবীন
পৌষের সোনালি রোদের মত
মিষ্টি ছিল না আমার জীবন
ছিল না ভরা চাঁদের জোছনাস্নাত স্নিগ্ধকোমল।
গোধূলির আলো ও আঁধারের সন্ধিক্ষণে
দাঁড়িয়ে দেখেছি
জীবনের আঁধার ও আলোকিত অধ্যায়।।
আলোর দিকে পা বাড়ালে আঁধার ডেকে বলে
আমাকে ছেড়ে কোথায় যাবি?
আমি তো তোরই ছায়া।
আঁধারের দিকে ঘুরে দাঁড়াতেই আলো বলে
আমিই ঘুচাতে পারি জীবনের কালো।
তাই আলো ও আঁধারের মিলন মেলায়
খেলে যাই জীবনের খেলা
সাদা মেঘে ভাসিয়ে আশার ভেলা।
যেমন ছিলাম তেমনই আছি আমি একেলা।
❑
একজন শিক্ষকের আত্মকথা
নবী হোসেন নবীন
এ জীবনের সঞ্চয় করে যাই দান
বিনিময়ে চাই না তো কোনো প্রতিদান।
আমার প্রদীপ হতে জ্বেলে নিয়ে আলো
দূর করো জীবনের যত সব কালো।
প্রদীপের নিচে মোর নিকষ আঁধার
জুটে না তো ঠিকমত দুবেলা আহার।
তেল ছাড়া বাতি আর জ্বলে কতদিন
নিজে পুড়ে শোধে দীপ জালানির ঋণ।
জীবনের জালানিতে পুড়িয়ে জীবন
জ্ঞানের প্রদীপ জ্বালে আলোকিত মন।
পুড়ে পুড়ে যেইদিন দীপ নিভে যায়
মৃতদেহে মালা দিয়ে কবরে পাঠায়।
জীবনে যে সয়ে গেল শত অপমান
মরণে কী লাভ তারে মালা করে দান।
শিক্ষকও মানুষ বটে তারো আছে ক্ষুধা
অভুক্ত গুরুর কাছে কেনো চাও সুধা?
❑
গরিব মারার ফন্দি
সাইদুল ইসলাম সাইদ
ডিমের যে ভাই দাম বেড়েছে
গরিব মরবে জ্বলে,
আমজনতা লাফায় বেশি
মারবে যে কৌশলে।
মধ্যবিত্ত আছে যারা
কেমনে দেখি চলে,
আমায় নিয়ে মন্দ কথা
সমাজে যায় বলে?
সবকিছুর যে দাম বেড়েছে
তাদের কিবা তাতে?
আমরা নাকি বাঙালি ভাই
বলে মাছে ভাতে।
মাছ দিয়ে ভাত খাইছি কবে
সেটাই গেছি ভুলে।
ডিমের টাকা জোগাড় করতে
দু-হাত গেছে ফোলে।
গোশত খাওয়া মানা রে ভাই
গরিব যারা আছে।
এত দামে কেমনে কিনে
টাকা নাই যে কাছে।
❑
নরপশুর দল
সাইদুল ইসলাম সাইদ
বাবা মায়ে চিল্লাচিল্লি
খালি খালি করে?
নরপশু বন্ধুদের ওই
ঠাঁই দিও না ঘরে।
আপন করে নিলে তাদের
বিশ্বাস করলে বেশি।
সুযোগ বুঝে কেড়ে নিবে
তোমার মুখের হাসি।
হৃদয় কে তার বন্ধুরা যে
হত্যা করে মিলে।
রান্না করে খায় যে তারে
ভয় লাগেনা দিলে।
বন্ধু এমন নরপশু
আগে নাই যে জানা।
তাই তো মায়ে সবার সাথে
চলতে বলে মানা।
বলে মায়ে ভালো বন্ধু
এই জামানায় নাই।
আদবকায়দা পাবে কোথায়
শিক্ষা বেশি তাই।
❑
চিরকুমার কবি আজাহার
মাহবুব-এ-খোদা
কলম গ্রামে বসতবাড়ি
নাম আজাহার মিয়া,
সারাজনম দেখলো নারী
হইলো না তার বিয়া।
একা-একা কাটছে জীবন
পঁচাত্তর সন হবে,
দুঃখ চেপে হাসি মুখে
ঘুরেফিরে ভবে।
চুল পাকিলে মনে কাঁচা
দেখেই বুঝা যায়,
ছন্দমালা মাথায় নিয়ে
সুখের ছোঁয়া পায়।
দৃষ্টি কাড়ে আজাহার ভাই
দাঁত গিয়েছে পড়ে,
বাকিজীবন আল্লাহ তাকে
রাখুক সুখে ঘরে।
❑
অগ্নিসেনা
মুহাম্মদ আলম জাহাঙ্গীর
আমরা নবীন আমরা প্রবীণ
আমরা অগ্নিসেনা,
দেশের তরে সদা জাগি
হাজার রাত্রি বেনা।
অগ্নিকাণ্ড দুর্ঘটনা
ঘটলে কোনো স্থানে,
খবর জানার সাথে সাথেই
যাই ছুটে সেখানে।
দেশে যতো আগুন লাগে
সকল আগুন চেনা,
আমরা নবীন আমরা প্রবীণ
আমরা অগ্নিসেনা।
আমরা সকল আগুন নিভাই
করে হাজার চেষ্টা,
তাপ ধোঁয়াতে যাই না চলে
পেলে ক্ষুধা তেষ্টা।
দেশের সেবায় মোদের যদি
হয় গো কভূ মরণ।
আমরা সবাই হাসতে হাসতে
করব যে তা বরণ।
সৎ-সাহস আর শৃঙ্খলাতে
আমরা চিরচেনা,
আমরা নবীন আমরা প্রবীণ
আমরা অগ্নিসেনা।।
❑
শিক্ষক
ফারুক আহম্মেদ জীবন
শিক্ষা জাতির মেরুদণ্ড
শিক্ষক জাতির মাথা,
মাথা বিহীন ধড় শুধু তাই
থাকা নিছক বৃথা।
মাথার মত শিক্ষা,গুরু
অতিব মূল্যবান,
অসম্মান না করে তাকে
করতে হবে সম্মান।
পিতা জন্ম দাতা যেমন
গর্ভে ধরেন মাতা,
শিক্ষক তেমন চিনাই বর্ণ
ধরে কলম খাতা।
বাল্য শৈশব কৈশোরেতে
তার কাছেতেই পড়ি,
শিক্ষকেরই হাত-টি ধরে
হয় যে হাতে খড়ি।
বড় সুখেই কাটে জীবন
তাদের কাছে পড়ে,
বাড়ে সম্মান ছড়ায় খ্যাতি
আলোর জীবন গড়ে।
শিক্ষকের তাই জ্ঞানী কথা
করতে পারলে মান্য,
সাচ্ছন্দ্যে যে কাটে জীবন
জীবন হয় যে ধন্য।
❑
ভালোবাসার শহর
নূর মোহাম্মদ
সেই শহরটা আমার চেনা
থাকবেনা কেন লেনা দেনা?
গলির ভীতর অচেনা কোন
শব্দ ভাসে,
ভালোবাসার রং বদলায় না
শুধুই বদলায় মানুষ গুলো
আড়ালে তাই মুচকি হাসে।
তপ্ত খড়ায় হৃদয় গুলো
হয়ে যায় কখন এলো মেলো
কালবৈশাখী খুঁজে,
দমকা হাওয়ায় উড়ায় শাড়ী
কেঁদে ফিরে কোন সে নারী
নিশ্বাস ফুঁকে চক্ষু টারে বুঁজে।
অজানা এক শহর আছে যেথায়
ভালোবাসা খুঁজি এখন সেথায়
জীবনের রং টাকে বদলাতে
দুঃখ গুলো ভাগাভাগি করে
যেতে চাই তোমার সেই শহরে
থাকবো সেথায় তোমায় নিয়ে সাথে।
❑
রক্তক্ষরণ
এম.আর.এ. আকিব
আমার হৃদে রক্তক্ষরণ
তোমার মুখে হাসি,
তবু আমি বলছি দেখো
তোমায় ভালোবাসি।
আমার মনে বিষাদ সিন্ধু
তোমার মনটা ভালো,
আমার শহর অন্ধকার আর
তোমার ঘরে আলো।
আমার চোখে গভীর রাতে
অশ্রু ঝরে পড়ে,
তোমার চোখে খুশির আমেজ
ঝিলিমিলি করে।
চোখের নিচে কালি জমে
জানায় ব্যথার কথা,
নতুন মানুষ নিয়ে আজকে
তোমার ব্যাকুলতা।
আমার আকাশ অমাবস্যায়
অন্ধকারে ঢাকা,
জোছনার আলোয় সাজিয়ে আজ
তোমার আকাশ রাখা।
বৃষ্টিতে প্রিয়তমা
এম.আর.এ. আকিব
বর্ষার আগমনে আকাশেতে মেঘ,
বৃষ্টির মাঝে মোর মনেতে আবেগ।
চারদিকে ঝুমঝুম বৃষ্টির মাঝে,
হৃদয়ের মাঝে মোর রংধনু সাজে।
নীল শাড়ি, নীল চুড়ি পরে তুমি আজ,
ভিজবে যে বৃষ্টিতে পাবে নাকো লাজ।
বর্ষার বৃষ্টিতে থৈ থৈ পানি,
তোমা দেখে লাগে মোর হৃদয়ের রানি।
তোমা দেখে এ হৃদয়ে প্রেম-প্রেম জাগে,
তুমি ছাড়া সব কিছু শূন্য যে লাগে।
বর্ষার এ বেলায় তুমি কেন একা?
তোমা নিয়ে আমার এ কবিতাটি লেখা।
প্রিয়তমা তুমি মোর বৃষ্টি বিলাসী,
বলিনি তো তোমা আমি কতো ভালোবাসি।
তুমি হলে মোর কাছে সবচেয়ে দামী,
প্রিয়তমা চলো আজ বৃষ্টিতে নামি।
❑
মানবতা
এম.আর.এ. আকিব
বর্তমানে সবাই ধরে
ভালো লোকের সাজ,
পরের জন্য কভু তারা
করে না তো কাজ।
সামনা-সামনি ভালো সাজে
পেছনে দেয় বাঁশ,
সুযোগ পেলে করে তারা
গোপন কথা ফাঁস।
অনাহারী ক্ষুধার জ্বালায়
পাতে যখন হাত,
সবাই ব্যস্ত আপন কাজে
দেয় না তো কেউ ভাত।
গরীব-দুঃখী কেঁদে মরে
ক্ষুধার যন্ত্রণায়,
ধনী লোকে নিজের টাকায়
ইচ্ছামতো খায়।
মুখে সবার মানবতা
কাজের বেলায় নাই,
কোথায় গেলে পাবো আমি
মানবতা ভাই?
❑
আমাদের গ্রাম
জাহাঙ্গীর চৌধুরী
আঁকাবাঁকা মেঠোপথ গেছে বহুদূর,
দিবানিশি শোনা যায় পথে হাঁটা সুর।
সকালে কৃষক যায় কাঁধে নিয়ে হাল,
জেলেরা মাছ ধরতে খোঁজে বিলখাল।
ঋতুরাজ এলে জাগে ফুল পাখি গান,
আনন্দে জুড়ায় সদা মানুষের প্রাণ।
গ্রীষ্মে আসে মিষ্টি ফল রসে ভরে মুখ,
ছেলেবুড়ো খেয়ে খুব প্রাণে পায় সুখ।
বরিষায় নদী করে স্রোতে কলকল,
ভেঙে নেয় দুই তীরে দুখীর সম্বল।
শরতের বনে জাগে সবুজের মেলা,
আকাশের গায় ওড়ে সাদা মেঘ ভেলা।
নবান্নের গান বাজে হেমন্তে মধুর,
মনকাড়া পিঠা খেয়ে সখ করি দূর।
শীতের হিম ঝরায় গাছে গাছে পাতা,
মানব খুঁজে বেড়ায় উষ্ণ লেপ কাঁথা।
এই আমাদের গ্রাম কাটি বারোমাস,
সুখেদুখে রচি নিত্য কতো ইতিহাস।
সবুজ শ্যামল দেশ সুখী বাংলাদেশ,
হাজার দেশের সেরা রূপের অশেষ।
❑
খোকার বয়স পাঁচ
জাহাঙ্গীর চৌধুরী
খোকা নাকি বড়ো এখন
বয়স মাত্র তার পাঁচ।
বড়শি দিয়ে তালপুকুরে
ধরবে নাকি সে মাছ।
খুকু বলে বয়স তোমার
লেখাপড়া শেখার।
খাতা কলম পুস্তক নিয়ে
ইস্কুলেতে যাওয়ার।
করিওনা সময় নষ্ট
দুষ্ট বুদ্ধির ছলে।
ইস্কুলেতে যা-ও তুমি
ছলচাতুরী ভুলে।
তুমি হবে দেশের হরষ
লেখাপড়া শিখে।
এদিক সেদিক ঘুরলে তুমি
জীবন হবে ফিকে।
❑
ভোরের হাওয়া
ফেরদৌসী খানম রীনা
ভোরের মিষ্টি হাওয়ায়
পাখিরা গাইছে গান,
ফুলের সৌরভে ভরে
গেলো মনপ্রাণ।
সূর্য্যিমামার আলোতে
রাঙালো চারিদিক,
ঘাসের উপর শিশির কণা
করছে ঝিকমিক।
ভোরের হাওয়ায় মনটা
হয় ফুরফুরে সতেজ,
চারপাশে দারুণ পরিবেশ
মনোমুগ্ধকর আমেজ।
মনে হয় সারাদিন আজ
কাটবে ভালো,
সাথে সূর্যটাও যদি বিলাই
তার স্নিগ্ধ আলো।
ভোরের মিষ্টি হাওয়ায়
সবই ভালো লাগে,
তাইতো সবাই প্রতিদিন
খুব সকালে জাগে।
❑
শরতের ভেলা
নাসরীন খান
শরত এলো মেঘের ভেলায়
ঝিরিঝিরে বৃষ্টির খেলায়,
শুভ্র মনের আঁচল পেতে
আকাশ দেখি মুগ্ধতা গেঁথে,
আমার মনে দোলায় কাশবন
হিমেল হাওয়ায় নাচে শনশন,
চোখের কোণে আনন্দ খেলা
সাদা ভেলার কাশফুল মেলা,
শরতের রূপ বৈচিত্রে ভরা
নতুন করে সাজে এ ধরা,
কাশফুল আর মেঘ সাদা
মনের আঁচলে আনন্দ বাঁধা,
এমন রূপে সবাই পাগল
খুলে যায় মনের আগল।।
❑
অভিমানী সে
কনক কুমার প্রামনিক
মেয়েটির বড়ই অভিমান
কারণে অকারণে,
পান থেকে চুন খসলেও
সহসা পড়ি রণে।
মনটা যে তার খারাপ না
রাগ খানিক বেশী,
গাল দুটো লাল হয়ে যায়
রাগলে যদি হাসি।
খুব সরল মনটা তার
বুকে আগলে রাখে,
যতই মান হোকনা তার
ছেড়ে কভু না থাকে।
❑
বৃন্দাবন (গীতিকবিতা)
মজনু মিয়া
ও গো /রাধা তুমি বৃন্দাবনে সুভাষিত ফুল
কৃষ্ণ অলি ফুলের গন্ধে হয় যে আকুল
ও তার প্রেমের বাঁশি বাজলে প্রাণে
রাধার প্রাণ হয় ব্যাকুল।।
কৃষ্ণ কৃষ্ণ নাম গোপীজন
করে তারা সারাক্ষণ
রাধাবীনে সুধা পায় কয় জন
বিফলে বসা নদীর কূল।।
প্রেমের লীলা হয় নির্জনে
বৃন্দাবনে গোপনে
বিরহ কী প্রেম মিলনে
রাধাকৃষ্ণ জড়ায় কোল।
⭕
স্বর্গ
আনজানা ডালিয়া
তোমার কোম্পানির সিল দিতেই হবে এমনটা কেন ভাবো
সিঁদুর দিতে হবে,
শাঁখা পলা লাগবে কেন?
তুমি তো তাকে পুরো পৃথিবী দিয়ে দিলে
যেখানে আছে ফুলের সৌরভ
পাখির কুহুতান,
ভালোবাসার অঞ্জলী,
কথার ফুলঝুরি,
আহ্ মরি মরি
আর কি চাই বলো?
স্বর্গ তো রচনা হলো।
❑
শিমুলতলী সেতু
আনজানা ডালিয়া
প্রকৃতির প্রতি পরতে পরতে তোমাকে দেখি
বৃষ্টির ছাটে দেখি তোমার মুখটা আঁকা
শিমুল তলী সেতুর এ প্রান্তে দাড়িয়ে দেখি তোমারই অবয়ব
অশোকের পাশে দাড়ানো তুমি কি সুন্দর হাসছিলে
জানি গত জন্মেও তুমি আমার ছিলে।
যদিও জানি তুমি ছোঁয়া থেকে বহুদূরে
তবু আছো হৃদয় জুড়ে।
❑
রক্ত প্লাবন আমি চোখে দেখি নাই
সাঈদুর রহমান লিটন
রক্ত প্লাবন আমি দেখি নাই
তবে রাখালের ঠোঁটবাঁশির করুণ সুর শুনেছি,
চিল ওড়া নদীর কিনারে বসে থাকতে দেখেছি একাকি।
বুকের ভিতর রক্তপ্লাবন সহসা থেমে গিয়েছিল।
কালোচোখে দেখেছি রোহিত সাগরের স্রোত,
নিঃশ্বাসে অনুভব করেছি সাহারা মরুভূমির উষ্ণতা।
বক চোখের চাহনির তীক্ষ্ণতা কমতে দেখেছি
কালোচুল সাদা হয়ে উলুখড় ছনের বাতা হতে দেখেছি,
দেখেছি মহা প্রতাপশালী যুবক ভিখারি হতে।
রক্ত গঙ্গা আমার চোখে পড়েনি,
রাখালের চিবুক পিষাণো মাটির চূর্ণ দেখেছি
পাথরের সাথে আঘাত রত থেঁতলানো মস্তক দেখেছি
পথের ধারে পড়ে থাকতে।
❑
❑
মনাঞ্চল
নাদিরা বেগম
মন খারাপের দেশে আমার স্থায়ী বসবাস
জীবনের পরতে পরতে যেথায় দু:খের হয় চাষ
মনাঞ্চলে প্রবেশ করতে লাগেনা ভিসা টিকেট
চোখের জলে ভেসে ভেসে আসে বারো মাস ।
বসন্ত বা বর্ষার ফুলে হাসেনা মনাঞ্চল
ক্ষুধার রাজ্যে কঙ্কাল সার দেহে দু:খের আস্ফালন
দু:খের ফসলে ভরে উঠে এই মনাঞ্ল
উছলে পরা কান্নার স্রোত আছড়ে পরে মনতীরে
চোখের জলের স্রোত সেচের ব্যবস্থা নেয় করে
দু:খের ফসলের বাম্পার ফলনে মনাঞ্চল উঠে ভরে
অংশিদার হয়না কেউ আপন কিবা পরে।
❑
ফুলের কলঙ্ক
শাহীনুল ইসলাম
পথের কোমর ধরে হেঁটে যায় পথচারী, গাছপালা নদীনালা সবুজময় পাখি
অদূরে ফুলের গন্ধ ভাসে , ছুঁয়ে যায় পথচারীময় পথ
ফুল — জানেনা তাঁর শরীরে কিসের গন্ধ
হাওয়ার প্রশ্নে উত্তর পাওয়া যায় ফুলেরও কলঙ্ক আছে ...
❑
প্রিয়তি এখানে শরৎ এসেছে"
রফিকুল ইসলাম
জানি না কেমন আছ প্রিয়তি
দূরে— বহুদূরে অচিন দেশে,
ওখানে কি শরৎ এসেছে নিবিড় বর্ষাশেষে?
এদেশে এখন নীলাকাশে উড়ন্ত সাদামেঘ
আবারিত সবুজ মাঠ হাতছানিতে ডাকে
শরতের ফুল পাখি উৎসবে উঠেছে মেতে।
এখানে বিল-ঝিলের বুকে শুভ্র শাপলা
ফুটে আছে প্রেয়সীর মতো হেসে
শালিকের দল উড়ে যায় কাশফুল ঘেষে।
মৃদু বাতাসে কাশকন্যা দোলে নদীর দু'ধারে
জল ছেড়ে নদীর বুকে সাদা বকেরা উড়ে
নৌকার মাঝি গান ধরে ভাটিয়ালী সুরে।
এখনে কিশোরীর মতো মৃদু হাওয়ার স্নিগ্ধতা
শিউলি ঝরে পড়ে খোঁপাতে জড়াতে উতলা
পুলকে দোয়েল শিস দিয়ে যায় ভোরবেলা।
প্রিয়তি, তোমার ওখানে কি শরৎ আসে
প্রভাতে শিশির পড়ে কি সবুজ দূর্বাঘাসে,
নদীর দু'কূল ভরে কি কাশফুল শোভাতে?
❑
শরৎ
নাদিয়া নওশাদ
ষড়ঋতুর দেশ,বাংলাদেশ।
এর অপরূপ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের
নেই কোনও শেষ।
ঋতুর পালাবদলে শরৎ এর আগমন,
নির্মল প্রকৃতির অকৃত্রিম রূপ দেখে
বিমোহিত হয় মন।
শরৎ এর সুনীল,শুভ্র আকাশ,
বহে দেহ-প্রাণ জুড়ানো মৃদু বাতাস।
হঠাৎ হঠাৎ আকাশে ঘন মেঘের রেখা
একটু-আধটু মেলে টুপটাপ বৃষ্টির দেখা।
অনিন্দ্য সুন্দর কাশবন,
দেখে মনে হয় যেন
কাটিয়ে দেই বসে সারাক্ষণ।
শিউলির সৌরভে চারপাশ মুখরিত সতেজ প্রকৃতি,পল্লব বিকশিত।
শরৎ এ চারিদিকে শারোদীয় দুর্গোৎসবের ধ্বনি বেজে ওঠে,
উৎসব আমেজে মন মেতে ওঠে।
❑
খোকার জবাব
মোঃ দিদারুল ইসলাম
আচ্ছা খোকা, বলো শুনি
পাঁচ হালিতে কয়টা?
অংকের হিসাব বুঝি না হায়
আমি মাথা মোটা।
বাদ দিলাম তা, বলো দেখি
তোমার বয়স কত?
জবাব কেবল দিতে পারবেন
বাবা সঠিক মতো।
এবার বলো, পানির রং কী?
প্রশ্ন বেজায় সহজ,
আবোল-তাবোল জিজ্ঞেস করলে
ঘুরে আমার মগজ।
আচ্ছা শেষমেশ, বলো শুনি
কার আবিষ্কার গাড়ি?
আপনার প্রশ্নের জবাব ছাড়া
আমি সবই পারি।
❑
মজার ইলিশ
মোঃ দিদারুল ইসলাম
আচ্ছা আব্বু, বাজারে যাও?
আনবে মজার ইলিশ,
আম্মু যখন ভাজবে তেলে
ছড়বে গন্ধ চৌদিশ।
বোন যে আমার খুশি হবে
পেলে ইলিশ ভাজা,
বাজার থেকে আনবে কিন্তু
দেখতে মোটা-তাজা।
এইতো ক'দিন আগের কথা
ইলিশ মাছের রাজা,
সব মানুষই সস্তায় কিনে
খেতো গরম ভাজা।
নিত্য অভাব, ব্যাগ ধর বাছা
বাবা কেমন হতাশ,
ইলিশ খাওয়া হবে না আজ
আনছি একখান পাঙ্গাস।
❑
ইলিশের বদলে পাঙ্গাস
মোঃ দিদারুল ইসলাম
স্ত্রী-সন্তান ও মা-বাবাসহ ছয় সদস্যবিশিষ্ট পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি আমি। আমার ছোট মেয়ে দিশা ক্লাস এইটে পড়ে। পরিবারের সবার বেশ আদরেই শৈশব কাটছে তার। দেখতে দেখতে সে এবার চৌদ্দ বছরে পদার্পণ করেছে। বড় ছেলে সিয়াম আগামী বছর এসএসসি পরীক্ষা দিবে। মোটামুটি পড়ালেখা নিয়েই ব্যস্ত থাকে বেশিরভাগ সময়। কিছুটা শান্ত প্রকৃতির ছেলে সে। এটা চাই, ওটা চাই - এসবের ধার ধারে না সিয়াম। কিন্তু দিশার বেলায় এর উল্টো চিত্র।
মাসের আজ শেষ শুক্রবার। মাছ-তরকারি কিনতে বাজারে যাওয়ার প্রস্তুতি শেষ করে সিয়ামের মাকে ডাক দিলাম, কই গেলা? বাজারের ব্যাগ আনো তাড়াতাড়ি।
আমার কথার আওয়াজ পেয়ে দিশা চলে এলো। আর বলল, আব্বু অনেক দিন হয় ইলিশ মাছ খাই না। বাজার থেকে একটা বড় সাইজের ইলিশ মাছ আনবে কিন্তু!
আমি ক্ষণিকের জন্য চুপসে গেলাম। সোস্যাল মিডিয়া, টেলিভিশন কিংবা পত্র-পত্রিকায় ইলিশের দামের কথা শুনে আমার মতো মোটামুটি বেতনের চাকুরীজীবিদের ইলিশ মাছ কেনার সামর্থ্যতা দিনদিন হারিয়ে যাচ্ছে। ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেটের কবলে পড়ে নিত্যপণ্যের দামের বেসামাল অবস্থায় নাজেহাল হচ্ছি প্রতিনিয়ত। এদিকে আবার চলতি মাসের এটিই শেষ সপ্তাহ। পকেটের যা অবস্থা! নানান দুশ্চিন্তা ঘুরপাক খাচ্ছে মনের মধ্যে। ছেলেমেয়ের লেখাপড়ার লাগামহীন খরচের কথা না হয় বাদই দিলাম।
দিশা আবারও আমাকে উদ্দেশ্য করে বলল, তুমি কি ইলিশ মাছ আনবে না, আব্বু?
আমি রোবটের মতো কোনোরকমে মাথা নেড়ে জবাব দিলাম, ঠিক আছে মামনি বাজার আজ একটা বড় সাইজের ইলিশ মাছ কিনে আনব।
এরমধ্যেই দিশার মা এসে বলল, এই নাও বাজারের ব্যাগ।
বাজারের তরকারি পট্টিতে অনেক দিন পর বন্ধু মমিনুলের সঙ্গে দেখা। আমাকে দেখে তার চোখে-মুখে উৎফুল্লতার ছাপ পরিলক্ষিত হলো। আমাকে বলে উঠল, কী খবর কবি বন্ধু?লেখালেখি তো ভালোই চলছে।
আমি মুচকি হেসে বললাম, ভালো আছি তোমাদের দোয়ায়। তোমার শরীর কেমন যাচ্ছে এখন?
সে উত্তর দিলো, এই তো আছি মোটামুটি। প্রতিদিন দু'ঘণ্টার মতো হাটি।
ইদানিং বন্ধু মমিনুলের হার্টের প্রবলেম ধরা পড়েছে। ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী কী কী খাবার মেনু ফলো করে, এসব বিষয়ে কথাবলার ফাঁকে দুইজনেরই পরিচিত এক ভদ্রলোক সামনে পড়ল। হাতে একটা পলিথিন ব্যাগের ভেতর নাকি দেড় কেজির সামান্য বেশি ওজনের দুটি ইলিশ মাছ।
আমি দাম জিজ্ঞেস করলাম, মাছ দুটো কতো দিয়ে কিনেছেন?
তিনি উত্তর দিলেন, এক হাজার নয়শো চল্লিশ টাকা।
এবার আমি বললাম, আপনাদের মতো লাখ টাকা বেতনের চাকুরীজীবিদের পক্ষেই কেবল সম্ভব এতো দামের ইলিশ মাছ খাওয়া।
ভদ্রলোক বললেন, কী যে বলেন আপনি?
উনি মনে হয় ভেবেছেন, আমি রসিকতা করেছি।
আসল সত্য এটাই। আর মাছের বাজারে কয়েক মিনিট দাম-দর হাঁকাহাঁকি করে ইলিশ কেনার সাধ মিটে গেল আমার। যে কয় টাকা নিয়ে বাজারে এসেছি, ইলিশ মাছ কিনলে আর সব বাজার করা বাদ দেওয়া লাগবে। বাড়িতে এসে বৌয়ের কড়া কড়া কথা হজম করতে হবে।
তাই কম দামের দু'য়েক প্রজাতির মাছ এবং সঙ্গে দুই কেজির বেশি ওজনের একটা পাঙ্গাস মাছ কিনে ব্যাগে ভরলাম।
এবার সবজির পট্টিতে প্রবেশ করলাম। এক পরিচিত সবজি দোকানের পাশ থেকে কম দামের বড়বড় এক কেজি ইন্ডিয়ান পেঁয়াজ ও এক কেজি আলু কিনলাম। দাম কষাকষি করে কিছু সবজিও নিলাম। জানিনা কেন যেন ইদানিং সবকিছুতে দর কষাকষি করি আগের তুলনায় অনেকটাই বেশি। পকেটে হাত দিয়ে দেখি বাড়ি থেকে যে টাকা নিয়ে বের হয়েছি, তা প্রায় শেষ পর্যায়ে।
কী দিনকাল পড়েছে! আগের মতো ফলমূলও খেতে পারি না টাকা-পয়সার অভাবে। হাহাহা, তাই চল্লিশ টাকা কেজি দরে বড় সাইজের এক কেজি বরিশাইল্যা আমড়া ও ত্রিশ টাকা দিয়ে একটা জাম্বুরাও কিনলাম সবজি কেনাকাটার এক ফাঁকে।
বাজার থেকে বাড়ি ফেরলাম দ্রুত। কারণ, আজ জুম্মার দিন। বাড়িতে এসেই চিৎকার-চেঁচামেচি শুরু করলাম, কই গেলা দিশার মা? এই নাও তোমার বাজার।
এদিকে দিশা আমার গলার আওয়াজ শুনতে পেয়েই দৌড়ে এলো। আর বাজারের ব্যাগ চেক করে ভ্রু কুঁচকে মুখে অমাবস্যার অন্ধকার নিয়ে বলে উঠল, ইলিশের বদলে পাঙ্গাস?