সাপ্তাহিক আয়োজন













 শনিবার  ❑ ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ইংরেজি  ❑ ১৫ আশ্বিন  ১৪৩০ বঙ্গাব্দ ❑ উলিপুর-কুড়িগ্রাম। 


আততায়ী হতেই হবে 

হিলারী হিটলার আভী 


আমি তখন কাঁদবো না -

যখন ক্ষুধার্তরা - ক্ষুধার জ্বালায় অকালে মৃত্যুবরণ করবে!


আমি তখনও কাঁদবো না -

যখন ধর্ষিতা - আবারও গণধর্ষিতা হবে

কিংবা আইনের অবহেলায় শেষে লজ্জায় ঘৃণায় আত্মহত্যা করবে!


আমি তখনও কাঁদবো না -

যখন সুদ-ঘুষ আর মদের পেয়ালা টইটম্বুর হয়ে অসহায়দের হৃদে ঈগলের থাবা আঁকবে!


কারণ? আমি কাঁদলে -

ঐ কুলাঙ্গারদের আততায়ী হতে পারবো না,

যেহেতু - আমাকেই - আততায়ী হতেই হবে!


কথামালা

মারুফ হাসান


কথার মাঝেই ফুটে উঠে কোন কাননের ফুল 

কাথার মাঝেই উঠে আসে জাতের গন্ধ কুল কথা হলো সভ্য মনের বিশাল ধারার গুণ 

কথার মাঝেই রক্ত ঝড়ে শরীরে আগুন ।


কথার মেলায় কথামালা যত্ন করে রাখে 

কেউবা আবার যতন করে কথার পেঁচে মাখে, কারো কথা এতই তিতা মুখে আনা দায়

অনেক আছে মন ভরে দেয় সুমধুর কথায়।


কেউবা আবার বলতে কথা কত বাহন খোঁজে কারো কথায় জীবন মরন কত কিছু বোঝে, কারো কথায় খুন হলেও সুন্দর ছবি আঁকে অকথ্য সব মুখের কথায় গন্ধ আসে নাকে।


কেউবা আবার কয়না কথা কাজে প্রমান লোক কারো কথার ইশারাতে গরীব গিলে ঢোক, কেউবা আবার বোবা শয়তান কয়না কথা মুখে মিথ্যা কথার প্রতিবাদে মানুষ বাঁচে সুখে।


এমন অনেক কথা আছে মুখে নেয়াই পাপ কথার উপর কথা আছে বাপের উপর বাপ,

গল্প কথার ফুলঝুরিতে কত মানুষ হাসে সত্য কথায় মরেও সুখ সবাই তাহার পাশে।



বাঁশির সুর 

গোলাপ মাহমুদ সৌরভ 


গ্রামের আঁকাবাঁকা মেঠোপথে বসে 

গোধূলি লগ্নে তুলে প্রেমের বাঁশির সুর 

 উদাসীন হয়ে কিশোরী খুঁজে বেড়ায় তারে

প্রকৃতির বাতাসে ভেসে যায় যেন বহুদূর। 

সুরে সুরে বাঁশি বাজে মনে দেয় প্রেম দোলা 

বড়োই প্রশান্তি লাগে সুর শুনি বসে নিরালা

মনে কতো সাধ জাগে তারে দেখিবার তরে

খাঁচায় বন্দী পাখির মতো ছটফট করে ঘরে। 

কে তুমি বাঁশি বাজাও থাকতে দাও না ঘরে 

রাতের আঁধার নেমে এলো জোনাকির আলো 

থমথমে আকাশ চাঁদ বিহীন যেন ঘোর কালো 

কলঙ্কিত করো না সমাজে থাকতে দাও ভালো।



নিশানা ঠিক করো

আনজানা ডালিয়া 


শুক্লপক্ষ আর কৃষ্ণপক্ষ চিনতে পারোনা

ভুল নিশানা নিয়ে পথ চলা যায়না 

তুমি নিশ্চিত তোমার সুখ ফুলের শহরে

স্বপ্ন নিয়ে আগাও হাত ধরে

ভালোবাসা দৃশ্যত কোন বস্তু নয়

নিরেট অনুভূতি এটা,বুঝে নিতে হয়,

ফুলের ডালি নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকো 

মনের গভীরে রঙ নিয়ে ডাকো। 


সময়ের চিত্রপটে

এবি ছিদ্দিক


প্রতিদনই দুঃখ রান্না করে সখিনা

আর রাত হলেই খয়রাতি সুখের উল্লাস দেখে

শীৎকারের নিঃশ্বাসে জীবনের যোগফল ওড়ে যায়

ভাঁজ করা ঘর থরথর কেঁপে উঠে


সময়ের চিত্রপটে দেখে নেয় অনাগত ভবিষ্যৎ

বাসযোগ্য পৃথিবীতে মানুষের পায়চারি

দু'চোখের অশ্রুতে খুঁজে রঙিন সকাল

শাড়ির ভাঁজে ভাঁজে খুঁজে আগামীর সুখ



বুকের কাঁপন

ফারুক আহম্মেদ জীবন


বন্ধ যেদিন হবে-রে মন

তোর বুকের কাঁপন,

সাদা কাফন পরাই সেদিন

করবে তোর দাফন।।

রে-মন, সাদা কাফন পরাইয়া তোর

করবে-রে দাফন।।


দাফন শেষে আপনজন সব

আসবে বাড়ি ফিরে,

তারপর একদিন ভুলে যাবে

সবায় ধীরে ধীরে।

তারপর, এমন একদিন আসবে-রে মন

যখন, কেউ তোকে কখনো আর

করবে না স্মরণ।।


এভাবে, দিন যাবে মাস যাবে

কত, যাবে-যে বছর,

তারপর একদিন ভুলেই যাবে

কোথায় তোর কবর।।

হায়রে, শত বছর যুগ-পৎ পেরিয়ে যখন

বৃক্ষ, তৃণ ভুজ আর লতায় ভরে

কবর হবে-রে-বন।।


তোর, সঙ্গী বিহীন সেই নিভৃতে 

থাকতে হবে দিনেরাতে,

তোর, সকল প্রশ্নের উত্তর দিতে 

হবে ফেরেশ্তাদের সাথে।।

মন তুই যে, পাশ করিলে সেই পরিক্ষায়

আলোকিত হবে কবর পূর্ণীমায়

আর রবে না নির্জন।।


যাবো শরৎ রাণীর দেশে

    রফিকুল ইসলাম

যাবো আমি  আকাশ নীলে 

মেঘের রথে ভেসে, 

মাঠ পেরিয়ে  ঘাট পেরিয়ে 

শরৎ রাণীর দেশে। 

দেখবো আমি শিশির কণা

দূর্বা ঘাসে ঘাসে, 

শাপলা শালুক ফুটে আছে 

নদীর বুকে হেসে।

হঠাৎ যদি পথ ভুলে যায়

দেখবো সবুজ ধান,

নদীর বুকে পালের নৌকা

শুনবো ভাটির গান। 

দেখবো যখন কাশ ফুটেছে

নদীর পাড়টি ঘেষে,

শুভ্র মেঘের রথটি তখন

নামবে নিচে এসে। 

শরৎ দেশের রূপের রাণী

রূপের স্বর্গবাসী

কাশের গুচ্ছ খোঁপায় গুজে 

বলবো ভালোবাসি।


পাতায় তাদের বাস

নূর মোহাম্মদ 

ছোট্ট পাখি ডিম পেরেছে 

পাতার ফাঁকে

তা দিয়ে ডিম ফুটাবার 

স্বপ্ন আঁকে।


রোদ বৃষ্টি মাথায় নিয়ে

বাসার পাশে

দিন গত হয় তা দিয়ে

সন্ধ্যা আসে।


এমনি করে দুই সপ্তাহ

পার করে

ফুট ফুটে ছা আসে 

তাদের ঘরে।


সুখে থাকে টুনটুনিটা 

পাতার তাহার বাস

এমনি করে তাদের জীবন 

চলে বারো মাস।


লেখাপড়া 

মোঃ দিদারুল ইসলাম 

গভীর ধ‍্যানে লেখাপড়া 

খোকন সোনা করো,

আলোকিত মানুষ রূপে 

জীবনটাকে গড়ো।


জ্ঞান আহরণ করতে খোকা 

বইখাতাকে ধরো,

অসৎ সঙ্গ ত‍্যাগ করো আর

মোবাইল ফোন ছাড়ো।


বর্তমানে উচ্চ শিক্ষায়

তুমুল ভর্তি লড়াই,

একটু পড়েই দেখিও না

পাণ্ডিত্য আর বড়াই।


খেলাধুলা পরিমিত 

পড়া বেশি বেশি,

জ্ঞানের ট্র‍্যাকে ছিটকে পড়ে

মহা শক্তির পেশি।


মোবাইল গেম খেলা বন্ধ 

করো খোকন শপথ,

দেশের সেরা মানুষ হতে

ছাড়বে তুমি কুপথ।



মাইন্ড সেট 

 আলম ভূঁঞা কাজী

আমরা যদি সঠিক ভাবে

মাইন্ড সেট করি,

উল্টা-পাল্টা কমেন্ট করে 

বলব না আর সরি। 


তোমরা পজেটিভ স্থানে যদি

মাইন্ড সেট করো, 

বিরূপ ধারণা কমে যাবে

ধরে রাখতে পারো। 


নিজের কাজে নিজে যেমন

অন্যকেও ভাবো তেমন,

নিজের কর্মে থেকো ঠিক 

অন্যকেও ভাববে সঠিক। 


মাইন্ড সেট যদি তোমার 

একদম ভালো হয়, 

তোমার দ্বারা অন্যের ক্ষতি

কোনো দিন-ই নয়।


শরৎ মেয়ে

 মন্ডল জিৎ


শরৎ মেয়ে আয়রে ছুটে 

আয়রে হাওয়ার বেগে,

তোরে নিয়ে ঘুরতে যাবো 

 পেজা তুলার মেঘে।


শিউলি ফুলের মালা দেবো

 খোঁপায় কাশ ফুল,

 নীল পাড়ের শাড়ি দেব

 সাদা কানের দূল।


সিছকাঁদুনি বৃষ্টির মাঝে

ভিজবো দুজন মিলে,

মঠভরা ঐ সবুজ ক্ষেতে

চলবো হেলে দুলে।



আনন্দের শরতকাল 

জাহাঙ্গীর চৌধুরী 


পড়েছে আজ কুহেলির চাদর 

দুর্বাঘাসের উপর। 

মেঘ তাড়িয়ে হিমেল সমীরণ

ভেঙেছে বৃষ্টির ঘর।

তরুর কাছে অশনি সংকেত 

পল্লবী ঝরার বার্তা। 

বৃষ্টি শূন্যতায় নির্ঝরের গায়ে 

লেগেছে অনেক ব্যথা।

হাসনাহেনা যুই চামেলি খোশে

নিশির আঁধারে হাসে।

গন্ধভরা নিশি কাটবে সবাই 

নিদ্রায় অতি উল্লাসে। 

কঁচি ধানের পাতা ঢেউ খেলায়

ঝলমল করে জল।

নদীর ধারে ফুটেছে কাশফুল 

আকাশে বকের দল।

নিরবে কাটে নদীর দিনকাল 

মাঝিরা ওড়ায় পাল।

আসল আজকে ভুবন নন্দিত 

আনন্দের শরতকাল।



ঘাটের তরী

মজনু মিয়া 

পারাপারের জন্য একটা

তরী বাঁধা ঘাটে,

ঘাটের তরী রেখে মাঝি

গেছে একটু মাঠে।


মাঠের পরে বাঁধা ছিলো 

দুটো পালের গরু,

গরু দুটো ঘাস খায় আর 

খায় সাথে রোজ তরু।


তরু খেলে মালিক এসে

নালিশ করে রাগে,

তরু খায় কেন্ বলবে কিছু? 

গরু আমার বাগে!


এ দিকে যে পারে এসে

বসে আছে লোকজন, 

দু'দিকেই সামলাতে হবে

পারাপার আয়োজন। 


আশ্বিন 

শুভজ্যোতি মন্ডল মানিক

প্রত্যুসে ঘাসের ডগায়,

লুটোপুটি খেলে শিশির কণা।

সূর্য কিরণে সবুজ গালিচায় 

ঝলমলিয়ে মুক্তোর গহনা। 


কমলা বৃন্তের শুভ্র শিউলী,

বক্ষে জড়ো শতো ব্যথা।

নিশীথ শিউলী প্রভাতে ঝরে,

গন্ধে ভরায় শরৎ আঙিনা।


হলদে পাখির মন আনচান,

কাজলদিঘী নয়নে স্বপ্ন পাতা।

নব বিবাহিতা বধূর মতো,

জোড় বেঁধে ঘরবাসের বাসনা।


আশ্বিনা শরতের পথে পথে,

শিশির ছেঁচা হেমন্ত ইশারা।

রাত্রি গগনে ছুটন্ত নীহারিকা,

হেমন্তের অভ্যর্থনায় ব্যস্ততা।


প্রিয়া তুমি হিয়া 

মাহবুব-এ-খোদা 

চোখের আড়াল হলে তুমি 

বুক করে চিনচিন, 

তোমায় বিনে  শতকষ্টে 

যায় কেটে যায় দিন। 

তোমার  দিকে ঝুঁকে পড়ে 

এই হৃদয়ের প্রেম,

রাত্রি জেগে তাই এঁকে যাই

ভালোবাসার ফ্রেম। 

রক্তবর্ণ ঠোঁটের ভাঁজে 

খুঁজে বেড়াই সুখ,

অভিমানে দূরে গেলে 

ভেঙে পড়ে বুক। 

ওগো প্রিয়া  তুমি হিয়া

মিটাও মনের সাধ,

তোমার হাতের ছোঁয়া পেলে 

ভাঙবে খুশির বাঁধ। 


মানবতা

নবী হোসেন নবীন

মানুষের পরিচয় আকারে মানব

ভিতরে বসত করে আমিত্ব দানব।

আমিত্বকে নিজ হাতে করে বলিদান

অতঃপর মানবতার গাও জয় গান।


লোভের লাগাম ধরে নিজ হাতে টেনে

মানবতার নির্ঘণ্ট নিতে হবে জেনে।

কামের আগুনে ঢেলে বিবেকের বারি

পশুত্বের পরিসেবা দিতে হবে ছাড়ি।


হিংসার দাবানলে যে পুড়ে অবিরত

তার কাছে মানবতা সদা পরাহত।

ক্রোধকে বশে রাখার শক্তি নেই যার

মানবতা পরাভূত পদভারে তার।


রিপুর তাড়না হতে মুক্ত করে প্রাণ

নরমালঞ্চে ছড়াও মানবিক ঘ্রাণ।

মানুষের প্রতি যার নেই মানবতা

অমানুষ সেই ভবে হউক দেবতা।


শরৎ এলো দেশে

শাহীন খান 

শরৎ এলো দেশে

সুরের খেয়ায় ভেসে

পাখপাখালি গাইলো গান

শুনে জুড়ায় সবার প্রাণ! 


নদী তীরে কাশের বন

কেড়ে নিলে হৃদয় মন

রাতে জাগে চাঁদ ও তারা

জোছনা দেখে দিশেহারা। 


সকাল বেলা শিশির ঝরে

কাব্য লিখি বসে ঘরে

আপন মনে করি পাঠ

বাংলা  হলো সবুজ মাঠ! 


আমার দেশের চাষা

  সাইদুল ইসলাম সাইদ

আমার দেশের চাষারা সব

ঝড় তুফানে ভিজে 

সোনার ফসল ফলায় তারা

সম্মান পায় না নিজে।


রোদ বৃষ্টিতে জীবন তাদের

গরমে যায় ঘেমে।

তবু চলে দিনে রাতে

রয়না তারা থেমে।


অর্থনীতির চাকা রে ভাই 

তাদের হাতেই চলে

আমরা সবাই অন্ন পাগল 

জ্ঞানীরা যায় বলে।


দেহের যত শক্তি আছে

জমিনে দেয় ঢেলে

খুশিতে মন নেচে ওঠে 

ফসল তুলে ঠেলে। 

 

তাদের যদি সবাই মিলে

একটু ভালোবাসি।

সোনার ফসল ফলবে দ্বিগুণ

মুখে থাকবে হাসি।


তোমার আলো

রুশো আরভি নয়ন

রাগিণী তুমি মেঘ হয়ে

মুখ করেছো কালো,

হাসলে তুমি গগন হাসে

হাসে চাঁদের আলো।


কাঁদলে তুমি বৃষ্টি ঝরে

মনের আকাশ জুড়ে,

সম্মুখে স্বীয় নয়ন সিক্ত

বিরূপ পৃষ্ঠ পুড়ে।


বিন্দু তুমি আমায় নিয়ে

যাচ্ছো আজও ঘুরে,

সূর্যের মতো এখনও তুমি

লক্ষ্য মাইল দূরে।


নিরাশার বালুচরে  

নাদিরা বেগম

এক দিন এক বসন্তের রাঙ্গা প্রভাতে 

মেঘহীন আকাশে মৃদু মন্দ দক্ষীণা বাতাসে

রঙ বেরঙের ফুলের সাজানো বাগানে

কোকিলের কুহু কুহু মধুর সুরেরর ঝংকারে

হাতছানি দিয়ে ডাকলে আমাকে

প্রেমের  দ্বীপ শিখা জ্বালিয়ে দিলে—আমার হৃদঙ্গনে

হারিয়ে গেলাম দুজনে প্রেমের জোয়ারে

স্রোতস্বিনী পদ্মার ঢেউয়ের জলরাশীতে

নীল দরিয়ার অথৈ গভীর জলে

মেঘের ভেলায় চড়ে নীল আকাশের চূড়ে

জোৎ্স্না প্লাবিত রাতে চাঁদ তারার মেলায় । 

বসন্তে ফোটা ফুলের পাপড়ি

 ঝড়ে গেলো বর্ষার জলের প্লাবনে  

 নিরাশার বালুচরে শুন্য হৃদয়ে

বসে আছি আশার প্রদ্বীপ জ্বেলে। 


ছল করে 

নাসরীন খান

ছল করে খুকু করে একটু পরপর কান্নার ভান

সবার মনোযোগ যেন তার প্রতি থাকে টানটান 

এত ঢং সে শিখেছে কোত্থেকে পাই না ভেবে

কত অভিনয় তার কার আদর আগে নেবে

হাসি পায় তবুও হাসি না যদি  

হয় মন খারাপ 

এতটুকু মানুষ কিযে করে খোঁজে 

পাই না বাপ

আবদার আর আবদার সারাটা দিন শুধু ধরে 

মাঝে মধ্যে না শোনার ভান করে

 থাকি ইচ্ছে করে

 


কষ্টর লাল রঙ

কনক কুমার প্রামানিক

ইদানীং জমজমাট সুদের ব্যবসা শুরু করেছ  তিন বন্ধু রকি, বুলেট আর সাজু। বর্তমান সময়ে শর্টকাটে ধনী হওয়ার জন্য এ ব্যবসা নাকি সবচেয়ে ভালো। উচ্চ সুদে সাধারণ লোকজনদের টাকা ধার দেয় ওরা। খুব অল্প সময়ে তিন বন্ধুতে সুদের বিশাল সাম্রাজ্য গড়ে তুলেছে। সুদের টাকা সময়মতো দিতে না পারলে নাস্তানুবাদ হতে হয় ওদের কাছে।  আজ শুক্রবার দিন। পরিস্কার পরিচ্ছন্ন পোষাকে মুসল্লিরা মসজিদে গিয়ে জামায়াতের সঙ্গে পবিত্র জুমার সালাত আদায় করেন। নামাজের কিছুপূর্বে ইমাম সাহেব বিভিন্ন ধর্মীয় বিষয়ে খুতবা প্রদান করেন। আজ তিনি, সুদ ও ঘুষ বিষয় নিয়ে আলোচনা করছেন। বিষয়টি তিন জনের একদম ভালো লাগে না। ইমাম সাহেবকে গালিগালাজ করতে করতে মসজিদ থেকে বেরিয়ে আসে ওরা। ওদের ভয়ে ভীত সন্ত্রস্ত এলাকার সব লোকজন। ওদের বিরুদ্ধে কিছু বললে ক্ষতি হবার অনেক সম্ভাবনা আছে। তাই ওদের ভয়ে সবাই মুখ বন্ধ রাখে। বাইরে এসে বলতে থাকে এই ইমাম সাহেব ভালো না। তার কথার ঠিক নাই। তিনি উল্টাপাল্টা কথা বলেন। তাকে আর এ মসজিদে রাখা যাবে না। কদিন ধরে তুমুল আলোড়ন সৃষ্টি করলো মিথ্যা বানোয়াট এ ঘটনাটি। বিচার বসলো পরিষদ চত্বরে। মিথ্যার জয় হলো। 


ইমাম সাহেব মিথ্যা বদনাম নিয়ে চাকুরিচ্যুত হয়ে চোখ মুছতে মুছতে চলে গেলেন। চেয়ারম্যান ছিলেন সুদখোর বুলেটেরই আব্বা। ছেলের পক্ষ নিয়েই সালিশের রায় ঘোষণা করলেন। ইমাম সাহেব হুজুর লোক বলে তিনি নাকি বিশেষ বিবেচনায় মাফ করে দিয়েছেন। চাকরি গেল। তবে কোন শাস্তি দিলেন না।  ইমাম সাহেবকে চাকুরিচ্যুত করার পর গ্রামে থমথমে পরিস্থিতির সৃষ্টি হলো। সবাই এখন অন্তরালে বলে বেড়াচ্ছে, হুজুর লোকটা খুব ভালো ছিল। তার প্রতি এটা অন্যায় করা হয়েছে। কিন্তু ওদের সম্মুখে কিছু বলার সাহস কারো হলো না। দিনকে দিন তিনজনের অত্যাচারে এলাকাবাসী  অতিষ্ট হয়ে পড়লো। কেউ প্রতিবাদ করলে তার কপালে নেমে আসে নির্মম নির্যাতন। কাউকে সুদে টাকা ধার দিলে সুদের সুদ, তস্য সুদ আদায় করে সর্বশান্ত করেই ছাড়ে। ওরা তিনজন যখন হনহনিয়ে মোটরসাইকেল নিয়ে কোন গ্রামে ঢোকে তখন ভয়ে গ্রামবাসীর কলিজা শুকিয়ে যায়। কেউ কেউ এলাকা ছেড়ে পালিয়েও যান। আজ ওরা এসেছে আফজাল মিয়ার বাড়িতে। সুদের টাকা আদায়ের উদ্দেশ্য। গত বছর মেয়ের বিয়ের সময় সে কোন উপায় না পেয়ে ওদের কাছ থেকে চড়া সুদে একলক্ষ টাকা নিয়েছিল। প্রতি মাসে তার সুদ বিশ হাজার টাকা। প্রায় একবছর ধরে আসল টাকার দ্বিগুণ টাকা সুদই দিয়েছে ওদের। এবার মাঠে ভালো ফসল ফলাতে পারেনি বলে দু'মাস যাবৎ সুদের টাকা দিতে পারেনি আফজাল মিয়া। এই অল্প সময়ে মধ্যে সুদ আসল মিলিয়ে দুই লক্ষ টাকায় দাঁড়িয়েছে।


 আজ টাকা দেবার কথা ছিল তার। কিন্তু আফজাল মিয়া টাকার জোগাড় করতে পারেনি। ওরা এসে প্রথমে টাকা চেয়ে না পেয়ে বিশ্রী ভাষায় গালিগালাজ করতে থাকে। টিনের দরজায় ধরাম ধরাম করে করে সজোরে লাথি মেরে দরজা ভেঙে বাড়ির মধ্যে সদলবলে ঢুকে পড়ে। এখন বর্ষাকাল চলছে। সবে আমনের জমি চাষ করে বাড়িতে এসে বিশ্রাম করছে সে। এর মধ্যেই এমন একটা ঘটনায় হতচকিয়ে গেল। হঠাৎ সুদারুদের নজর আফজালের গরুর দিকে পড়ল। ওর মোট চারটি গরু। দুটি হালের গরু আর দুটি গাই গরু। বেশ স্বাস্থ্যবান। কমপক্ষে চারটি গরুর দাম তিন লক্ষ টাকা তো হবেই। কোন কথা না বলে গরু চারটার দড়ি খুলে নিয়ে হনহন করে চলে গেল। অনেক অনুনয় বিনয় করেও কোন ফায়দা হলোনা। শেষে ওদের পা চেপে ধরলো আফজাল। কিন্তু ওরা সজোরে লাথি মেরে গরু নিয়ে চলে গেল। গরু নিয়ে যাওয়ার সময় ফ্যালফ্যাল করে পথের পানে চেয়ে রইল। সে এক করুণ চাহনি। তার চোখ ফেঁটে গড়িয়ে পড়ছিল তপ্ত লোনা জলের ধারা। আফজালের পা থেকে লাল রক্তের ধারা ফিনকি দিয়ে ঝরছে। ডান পা টাতে একটা জোঁক ধরেছে । এতো কিছুর মধ্যে খেয়াল করতে পারেনি সে। রক্ত চুষে জোঁকটা বেশ বড়সড় হয়ে উঠেছে। আফজালের ছয় বছর বয়সী ছেলেটা এসে বলল, আব্বা তোমার পায়ে তো জোঁক ধরেছে। রক্ত ঝরছে। ছেলেটাকে জড়িয়ে হাউমাউ করে কান্নায় ভেঙে পড়লো আফজাল। ছেলেটাকে বুক জড়িয়ে নিয়েই বলতে লাগলো, এ আর কি জোঁক বাপ? কতই রক্ত খাবে? আসল রক্তচোষারা তো আমারে রক্তশূন্য করে দিয়ে গেল।

Read alsohttps://zugersahitto.blogspot.com/2023/10/blog-post_28.html

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)
নবীনতর পূর্বতন

তানকা/স্বপন শর্মা