❑ শনিবার ❑ ০৭ অক্টোবর ২০২৩ ইংরেজি ❑ ২২ আশ্বিন ১৪৩০ বঙ্গাব্দ ❑ উলিপুর-কুড়িগ্রাম।
❑
অযৌক্তিক যৌতুক দাবি
গোলাপ মাহমুদ সৌরভ
রোজ শুনি পাশের বাড়ির সখিনার কান্না
অভিশপ্ত যৌতুকের জন্য স্বামীর বেদম প্রহার
তার আর্ত চিৎকারে কেউ এগিয়ে আসে না
এ যেন সিনেমা নাটকের মঞ্চে দর্শকের উপস্থিতি
আঘাতের যন্ত্রণা উঠোনে শুইয়ে ভয়ে কাতরায়
তিনবেলা যার পেটে ঠিকমতো খাবার জুটে না
ছেঁড়া ব্লাউজ আর এক কাপড়ে যার দিন চলে
এমন অক্ষম স্বামী করে অযৌক্তিক যৌতুক দাবি
মাতব্বর এসে করে যৌতুকের গ্রাম্য শালিসি
মেয়ের সুখের জন্য এটা-ওটা করা উচিত
গরীব ঘরে জন্ম অসহায় নারী সখিনার
দুই শতক ভিটা মাটি সখিনার বাবা-র শেষ সম্বল
মাদকাসক্ত স্বামীর সংসারে অভাব-অনটন প্রতিনিয়ত
সখিনার উপর যৌতুকের জন্য নির্মম অবিচার।
সমাজ যেন যৌতুকের অভিশাপে আসক্ত
আর কতো সখিনা যৌতুকের দায়ে হবে অবহেলিত
মানবতা কী আজ যৌতুকের কাছে অবাঞ্ছিত
জেগে ওঠো নারী আর কতো হবে নির্যাতিত।
❑
পুঁটির লড়াই
জাহাঙ্গীর চৌধুরী
দু-পুটিতে লড়াই লেগে
দৌড়ে ঘাটে ঘাটে।
শোলেরা সব ঘাপটি মেরে
পিছে পিছে হাঁটে।
বোয়াল মাছে দেখে বলে
দাঁড়াও ওরে বাছা।
গালটা আমার মস্ত বড়ো
দেখতে একটা খাঁচা।
লড়াই তোদের বন্ধ করবো
গিলে খেয়ে আমি।
এ তল্লাটে কে-বা আছে
আমার চেয়ে দামী।
যেমন কথা তেমন কর্ম
পুঁটি খেলো গিলে।
বোয়ালমাছকে তুলে নিলো
খামচি দিয়ে চিলে।।
❑
মা-বাবার বকবকানি
মোঃ দিদারুল ইসলাম
হেসে খেলে আড্ডা মেরে
সময় করি সাবাড়,
মা আর বাবার বকবকানি
হবি রিকশার ড্রাইভার।
মায়ের কথা আমার নিকট
লাগে নিমের তিতা,
মোবাইল ফোন ধরবি না তুই
নিত্য ঝারেন পিতা।
মাধ্যমিকের ছাত্র আমি
লেখাপড়ায় ফাঁকি,
বছর প্রায় শেষ, সিলেবাসের
অধিকাংশই বাকি।
পড়ার চিন্তায় মাথা ঘুরে
আহা কী যে করি,
ইংরেজিতে যেমন তেমন
অংকের ভয়ে মরি।
এখন থেকে শপথ নিলাম
করবো জীবন ধন্য,
পিতামাতার চোখ রাঙানি
আমার ভালোর জন্য।
❑
মুন্ডমালিনী হয়ে এসো
শুভজ্যোতি মন্ডল মানিক
হিংসা বিদ্বেষে ছেয়েছে জগৎ,
চারিদিকে কেবল যুদ্ধ হানাহানি।
মা'গো কি করে গাইবো বন্দনা
কন্ঠে তুলবো দুর্গা আগমনী?
ঈর্ষার বিষে গড়া বিভেদে,
ক'তো তাজা প্রাণ হয়েছে বলি!
ক'তো উপাসনালয় পুড়ে ছাই!
রক্তে রঞ্জিত মৌলবাদের তরবারি।
উগ্রবাদী দানবের লালায়িত চোখ,
করেনি ক্ষমা শিশু কিশোরী কুমারী।
নররূপী অসুর বিনাশে এসো মাতা,
যে রূপে রণচণ্ডী কাটা মুণ্ডমালিনী।
❑
যুদ্ধ
ইলিয়াছ হোসেন
যুদ্ধ কভু দেয় না শান্তি
শুধু করে লয়,
যুদ্ধের ফলে কত মায়ের
বুক যে খালি হয়।
যুদ্ধের কারণে বিরামহীন
বাড়ে পণ্যের দাম,
প্রাণ বাঁচাতে পণ্য কিনতে
ঝরে দেহের ঘাম।
যুদ্ধাস্ত্রের ঘাতে সব আবাস
ধুলোর সঙ্গে মেশে,
কভু আবার স্বদেশ ছেড়ে
যেতে হয় ভিন দেশে।
যুদ্ধ মানে গোলার গন্ধ
যা বায়ুতে পাই,
বায়ুতে গোলার গন্ধ নয়
ফুলের সুবাস চাই।
যুদ্ধ ছেড়ে শান্তির পথে
থাকুক সারা বিশ্ব,
কভু না ঘটুক প্রাণহানি
কেউ না হোক নিঃস্ব।
❑
শরৎ এলেই মনের মাঝে
গোলাপ মাহমুদ সৌরভ
শরৎ তুমি ঠিকই এলে
এলো নাতো প্রিয়া,
কতো রঙের ফুল ফুটেছে
জুঁই চামেলি কেয়া।
গাছে গাছে ফুল ফুটে
শরৎ যখন আসে,
আমার ওযে ইচ্ছে করে
প্রিয়া থাকুক পাশে।
শরৎ মেঘে ভিজে যেতাম
ওই কাশবনের নীড়ে,
পাল ছেঁড়া নৌকো বাঁধা
খেয়া ঘাটের তীরে।
এসো প্রিয়া সবুজ মাঠে
শরৎ মেঘে ডাকে,
শরৎ এলেই মনের মাঝে
তোমার ছবি আঁকে।
❑
বালিকা তোমাকে অনুরোধ
সাঈদুর রহমান লিটন
মনের চোরাগলিতে ঠাঁয় দিও বালিকা
চাঁদের দেশে যাবো,
চাঁদের আলো ছিনিয়ে এনে তোমার গায়ে মাখাবো
পুরো চাঁদ এনে টিপ পরাবো কপালে।
অমাবস্যা এলে আঁধার রাতে আঁধার পথে হাঁটবো
আঁধার হতে কাজল এনে হরিণ চোখে পরাবো
তোমার আঁখির সাজ অপলক দেখতে দিও।
মালতী ফুলের তোরা এনে খোঁপায় গুঁজে
সেলফি তুলে রাখবো প্রফাইলে,
বালিকা মনের চোরাগলিতে ঠাঁয় দিও একবার।
❑
মেঘ ও কাশফুল
মজনু মিয়া
শরতের মেঘ থোকা থোকা
কিন্তু মেঘ ঝরে না,
শুকিয়ে মাটি ফাটা ফাটা
এক ফোঁটাও পড়ে না।
ভেসে চলে আকাশ গায়ে
দূরের কোন দেশে,
সাদা সাদা মেঘের ভেলা
যায় যে হেসে হেসে।
ঝিরিঝিরি বাতাস বহে
শুভ্র কাশের বনে,
এক গুচ্ছ ফুল তুলে নিতে
চায় যে তখন মনে।
___________________________
❑
জ্ঞানান্বেষণ
নবী হোসেন নবীন
জ্ঞানের ভাণ্ডার এ পৃথিবীর কাছে
আমি এক প্রদীপ জ্ঞান চেয়েছিলাম।
বিপুলা এ বসুধা বিনয়ে বলল
জ্ঞান ভিক্ষালদ্ধ ধন নয়
তাকে কুড়িয়ে নিতে নয়।
জলধির তলদেশ হতে হিমালয় চূড়ে
দেখেছি সযতনে ঘুরে
সক্রেটিস, নিউটন, আইনস্টাইন
আগেই কুড়িয়ে ভরেছেন ঝুলি।
সুধালাম,হে জ্ঞানের সঞ্চিত সাগর
আমাকে দিয়ে যান বর।
উত্তরিলা জ্ঞানতাপস বিনীত ভাবে
শ্রমের মূল্য তবে কোথায় পাবে?
❑
অপুষ্ট বীজ
মোঃ দেলোয়ার হোসেন
অপুষ্ট বীজ রোপণ করলে
ফসল ভালো হয়না,
না ভাবিয়া করলে কিছু
সফলতা রয়না।
বাবার গুণে ছেলে ভালো
মায়ের গুণে মেয়ে,
কর্ম গুণে সফলতা
আসতে পারে ধেয়ে।
চিন্তা ভাবনা না করিলে
বৃথাই করবে কষ্ট,
সফলতা আসবে না কো
জীবন হবে নষ্ট।
সময় থাকতে ভাবো মানব
কোনটা ভালো কর্ম,
বিবেক দিয়ে চিন্তা করো
বুঝবে সঠিক মর্ম।
মিথ্যার জালে বন্দী হয়ে
আর কতো কাল জ্বলবে,
জাগাও মানব বিবেক বুদ্ধি
সঠিক পথে চলবে।
❑
পাঠশালা
কনক কুমার প্রামানিক
শেখার কোনো অন্ত নাই
শিখতে সবে চায়,
শেখার জন্য পাঠশালার
বিকল্প যে নাই।
কিশোরকালে সকালবেলা
পাঠশালাতে যাই,
এমন মধু দিনগুলো যে
সবাই ফিরে চায়।
কৈশোরের সে পাঠশালাতে
কত শত স্মৃতি,
কিছু তার অমলিন আছে
কিছু আজ বিকৃতি।
❑
বাঁধন বাড়ি
আনজানা ডালিয়া
হোক একটা বাঁধন বাড়ি
হোক তা ফুলের বাড়ি
থাকবে ভালোবাসার ছড়াছড়ি
পূব দেয়ালে হোক পুই লতার জড়াজড়ি
মনের রঙ যেন বদলে না যায় সময়ের স্রোতে
মিষ্টি লাগবেনা দখিন দুয়ারে কোকিলের গান শুনতে।
❑
শরতে মামাবাড়ি
মাহবুব-এ-খোদা
শ্রাবণ শেষে শরৎ এলো
কালো মেঘের ছুটি,
আকাশ জুড়ে শুভ্র মেঘে
করে লুটোপুটি।
চারিদিকে গুমোট হাওয়া
স্বস্তি খুঁজে মনে,
নদীর ঘাটে স্নানের তরে
চলি দাদুর সনে।
ভাদরে তাল হাতে নিয়ে
এদিক সেদিক ঘুরি,
দুর্গাপূজার ছুটি পেয়ে
মনাকাশে উড়ি।
মায়ের সঙ্গে মামার বাড়ির
কাশের ফুলে মাতি,
মহানন্দে যায় কেটে যায়
দিন পেরিয়ে রাতি।
মামির হাতের পিঠা-পায়েস
ছড়ায় মিঠে গন্ধ,
মামার বাড়ি মজার হাঁড়ি
হয় না দুয়ার বন্ধ।