আড্ডায় অদৃশ্য সঙ্গী
আকিব শিকদার
ফিরে ফিরে আসবো আমি তোমাদের আড্ডায়
হয়তো বসবো না পাশে- চেয়ার টেনে যেমন বসেছি আজ
চুমুক দেবো না চায়ে, সিগারেট ফঁুকে উড়াবো না ধুয়া
তোমাদের বিজয়োল্লাসে রং তামাসায়
হাসবো অট্টহাসি, শুধু পাবে না শুনতে তোমরা
পাবে না দেখতে আমায়-
ফিরে ফিরে আসবো আমি তোমাদের আড্ডায়।
স্বদেশের ক্রান্তিকালে তোমরা যখন শোকে মৃয়মান
আজকের মতো সেদিনও আমি তোমাদের পাশে রবো
চারপাশ ছেয়ে রবে আমার অদৃশ্য ছায়া
তোমাদের বিষণ্ণ মুখ দেখে বেরুবে আমার দীর্ঘশ্বাস
তোমরা দেখবে শুধু বাতাস উড়িয়ে যায় ধুলো
পাবে না দেখতে আমায়-
ফিরে ফিরে আসবো আমি তোমাদের আড্ডায়।
স্বৈরাচারী শাসকের বিরুদ্ধে যখন ডাকবে মিছিল
মুষ্ঠিবদ্ধ হাতে, কী ভিষণ উদ্বেলিত উদ্ভাসিত
আমার এ হাত রবে তোমাদের সাথে আশিবার্দের মতো
খবরের প্রথম পাতায় ছাপা হবে তোমাদের ছবি
স্বর্ণখচিত শিরোনামে; শুধু আমার ছবিটা হবে না ছাপা
পাবে না দেখতে আমায়-
ফিরে ফিরে আসবো আমি তোমাদের আড্ডায়।
নিরাশার বালুচরে
নাদিরা বেগম
এক দিন এক বসন্তের রাঙ্গা প্রভাতে
মেঘহীন আকাশে মৃদু মন্দ দক্ষীণা বাতাসে
রঙ বেরঙের ফুলের সাজানো বাগানে
কোকিলের কুহু কুহু সুরেরর ঝংকারে
হাতছানি দিয়ে ডাকলে আমাকে
প্রেমের দ্বীপ শিখা জ্বালিয়ে দিলে—আমার হৃদঙ্গনে।
হারিয়ে গেলাম দুজনে প্রেমের জোয়ারে
স্রোতস্বিনী পদ্মার ঢেউয়ের জলরাশিতে
মেঘের ভেলায় চড়ে নীল আকাশের চূড়ে
জোৎ্স্না প্লাবিত রাতে চাঁদ তারার সাথে।
বসন্তে ফোটা ফুলের পাপড়ি
ঝড়ে গেলো আচমকা বর্ষার জলের প্লাবনে
নিরাশার বালুচরে শুন্য হৃদয়ে
বসে আছি দু:খের প্রদ্বীপ জ্বেলে।
এক টুকরো রোদ্দুর
শুভজ্যোতি মন্ডল মানিক
তুমি ছিলে,
হাড় কম্প অনুভূতির শীতের সকালে কু্য়াশার পাড় ভেঙে মধ্য গগনে সূর্যের উঁকি দেওয়ার মতো হৃদয় চনমনে খুশির আড়ম্বর।
তুমি ছিলে,
ক্লান্তি নামা পথে ধোঁয়া উড়ানো টনিকের মতো এক টুকরো খুশির পরশ মাখানো আহ্লাদে গদগদ অধর স্পর্শের নির্ভেজাল আদর।
তুমি ছিলে,
অগ্নি ঢালা সূর্যালোয় তাতিয়ে ওঠা মাটির বুকে টৈ টৈ করে ঘুরে বেড়ানো ঘর্মাক্ত দেহ মুছে দেওয়া রুমালের মতো বিশ্বস্ত;স্বস্তির।
তুমি ছিলে,
মধ্য রাতে স্বপ্ন দেখে ঘুম ভেঙে গেলেও আবারো স্বপ্ন দেখার বাহানায় নির্ঘুম চোখ বুজে কাছে পাওয়ার প্রার্থনা;
দিনভর চিন্তনে এক টুকরো সুখ রোদ্দুর।
পূজাদুর্গা
সনথ রায়
দুর্গা মায়ের আগমনে
আপ্লুত কাশবন,
বসন্ত আজ শিউলি ফুলের
জেগেছে প্রাণ মন ।
আসবেন মা সঙ্গে নিয়ে
কার্তিক, সরস্বতী, গণেশ, লক্ষী
মায়ের এই আগমনীর সুরে
সারা জগত সাক্ষী ।
বেলষষ্ঠীতে আসবেন মা জানি
আপন বাড়ির কোলে,
শুনেছি মা আজ থাকবেন নাকি
বেলগাছের ঐ তলে ?
সপ্তমী, অষ্টমী, নবমীতে
মহানন্দে সময় কাটে,
নতুন পোষাক নতুন রঙে
মণ্ডপে সবাই আসে ।
নানান খাবার নানান খেলনায়
নতুন নতুন দুকান বসে,
অনেক দূর-দূরান্তের লোকেরা
পূজা দেখতে আসে ।
দশমীতে মায়ের যাত্রার কালে
কান্নায় অশ্রু ঝরে,
নিজেই নিজেকে সান্তনা দেই
মা, আবার আসবেন বলে ।
স্যাংশন ফাংশন
জাহাঙ্গীর চৌধুরী
করিম চাচার জটিল প্রশ্ন
স্যাংশন ফাংশন কি কি ?
মাঠেঘাটে হাটে সবাই
করছে বকাবকি।
জবাব দিলাম তাকে আমি
নয়ন দুটি ঢেকে।
গণতন্ত্রের গলতি দেখলে
মার্কিন চোখ যায় বেঁকে।
কিসে গলতি করলাম আমরা
কষ্ট পেলেন তারা ?
নির্বাচনের স্বচ্ছতার মান
মানতেছেনা ওরা।
স্যাংশন চাইতাম রাষ্ট্রের কাছে
কিছু পাওয়ার জন্য।
স্যাংশন এখন আমেরিকার
ভিসা বন্ধে গণ্য।।
জীবন বীণা
মোঃ দিদারুল ইসলাম
মধুর সুরের বা বেসুরে ছন্দ তালের
লাল, নীল কিংবা কালো কষ্টের
হৃদয় নিংড়ানো কথামালার স্তুপ
হৃদয় গহীনে আজ জমেছে পর্বত সম,
মনে মনে আওড়াই, এই তো সে'দিন
তুমি ছিলে সবচেয়ে মনোযোগী শ্রোতা,
তোমার গিরিগিটি মার্কা চরিত্রের ছলনায়
আহা! কাবু হয়েছিলাম নিজেরই অজান্তে।
তোমার ছলনার নহরে হাবুডুবু খেয়ে
আজ একূল-ওকূল উভয়ই কণ্টকাকীর্ণ।
মনে মনে ভাবি নিরস বদনে নিরালায়,
গলা ফাটিয়ে সুরের মুর্ছনার ঝড় তুলে
বহুদিনের ছটফটানির অবসান ঘটাই।
কিন্তু তোমার কাছে করুণ আকুতির
কানাকড়ি দাম আছে কিনা সেই বিশ্বাসেও
ফাটল ধরেছে বেশ আগেই, হে পাষাণী।
তুমি তো আজ ধরা-ছোঁয়ার বাইরে,,,
তোমার অঢেল বিত্ত বৈভবের জৌলুস
আর আনন্দের সুরে মাতোয়ারা চারপাশ।
আমার মতো অভাগার আর্তনাদের সুর
তোমার কাছে হতে পারে চরম অতিষ্ঠের,
সেই দুর্ভাবনায় নিজেকে গুটিয়ে রাখি,,,
বাজাতে চাই না বেসুরের জীবন বীণা।
হৃদয়ের ভালোবাসা
বাপী নাগ
তুমি আছো অন্তরে...
এই শূন্য জীবনে কেউ যে নেই তুমি ছাড়া।
আমার অন্তর জুড়ে...
এই জীবনে কোন স্বপ্ন নেই যে তুমি ছাড়া।
ভালোবাসার গভীরে...
জীবনের প্রতিমুহূর্তে থাকবো তোমার পাশে।
মনটা দিও আমারে...
যাবো না দূরে থাকবো তোমায় ভালোবেসে।
ভালোবাসার মন্দিরে...
একে অপরের স্পর্শে থাকবো যে জড়িয়ে।
যেওনা কখনো দূরে...
ভালোবেসে তোমার হাতটা দিও বাড়িয়ে।
আমার ভালোবাসা...
তোমায় আজীবন এভাবে বেসে যাবে ভালো।
তুমি আমার ভরসা...
রূপকথার রানী তুমি আমার নয়নের আলো।
তোমার মুখের হাসি...
আমি যে খুঁজে পাবো তোমার হৃদয়ের মাঝে।
তোমায় ভালোবাসি...
এই ভাবে আছি আমি তোমার স্বপ্নের সাঁজে।
তোমার বন্ধু হতে চাই...
তোমার আশায় আমার মন যে পড়ে রয়।
তুমি ছাড়া আমি একাই...
তোমায় নিয়ে সারাদিন কিভাবে কেটে যায়।
মনটা দিয়েছো আমায়...
তার পরে, কিছু চাইবার থাকে না তো বাকি।
ভালো বাসবো তোমায়...
দূরে গিয়ে আমি দেব না তো কখনো ফাঁকি।
ইচ্ছে
ইলিয়াছ হোসেন
আমি বিলীন হয়ে যেতে চাইনা কালের গহবরে
মাথা উঁচু করে বেঁচে থাকতে চাই ধরণীর মাঝে
আমি আঁকড়ে ধরে থাকতে চাই না অতীত স্মৃতিকে
ভবিষ্যতের মাঝে খুঁজে নিতে চাই বাঁচার অবলম্বন।
মনের বিষণ্ণতা দূরে ঠেলে হাসতে চাই প্রাণ খুলে
জীবনের প্রতিটি স্তরে ফুটাতে চাই সুখের ফুল
ভালোবাসার আকাশে উড়াতে চাই রঙিন ফানুশ
দখিনের মৃদু হাওয়ায় সতেজ রাখতে চাই তনু মন।
শোকে কাতর জন্মদিন
মাহবুব-এ-খোদা
একটি শিশুর জন্মদিনে
চোখে ঝরে পানি,
কুচক্রীদের গুলির আঘাত
কেড়ে নেয় প্রাণখানি।
সেই শিশুটির তাজা রক্ত
আজও ছড়ায় ভয়,
অক্টোবরে দুখের খরায়
হৃদয় মরুময়।
কচিমুখে বিনয় করে
যাবে মায়ের বুকে,
রাসেল সোনার জন্মদিনে
বুক ফেটে যায় দুখে।
সত্য ভাষণ
নবী হোসেন নবীন
মিথ্যার ফুলঝুরি ছড়াতে আসিনি
সত্যের অগ্নিস্ফুলিঙ্গ ছড়াতে এসেছি।
আমি কারও চাকর নই
জনসেবার জিকির করতে আসিনি
আত্মসেবার মহান ব্রত নিয়ে এসেছি।
আমি কারও ভাগ্য বদলাতে আসিনি
আপন ভাগ্যের সন্ধানে এসেছি।
কাউকে খাওয়াতে আসিনি
নিজে খেতে এসেছি।
যা পাব তাই খাব
নিজ হাতে গড়ব বিত্তের পাহাড়।
অসহায় মানুষের হাড় দিয়ে গড়ে তুলব
সুরম্য প্রাসাদ
কেউ যদি গুনে গুনুক প্রমাদ।
নির্বোধ জনতার রক্ত দিয়ে স্নান করে
পূত-পবিত্র হবো
ধর্মালয়ের মিনারে উড়াব শান্তির নিশান।
কার কী আছে বলার
এ আমার রাজনৈনিক অঙ্গীকার।
হেমন্তে প্রাপ্তির আয়োজন
রফিকুল ইসলাম
শরৎ রেখে গেছে তার প্রণয় অভিসার
হেমন্তের আহব্বানে রুদ্ধ করিনি দুয়ার।
শিউলি সুবাসে শিশিরে নিশীথে হীম পরশে
মুক্তার দানা কে ছড়িয়ে গেছে ঘাসে ঘাসে।
ঝরা পাতার বিষাদে বাতাসে ভাসে তার গান
ভাসে মাঠে প্রান্তরে সোনালি ফসলের ঘ্রাণ।
পোয়াতি ধানের কিন্নরী গায় নবান্নের গীত
হীম কুয়াশায় এসেছে প্রত্যাশার কার্তিক।
শিশিরে ভিজে গেছে সব পথের উড়া ধুলো
রাঙা বউ ভাবে বসে এই বুঝি অঘ্রাণ এলো।
ভেজা ডানায় প্রজাপতি উড়ে বসে লাউ ফুলে
ভোরের হাওয়ায় কাঁচা-পাকা ধান মাঠে দুলে।
হলুদ সরিষা ফুলে মৌমাছির নিবিড় গুঞ্জরণ
শরতের সৃষ্টিতে হেমন্তে প্রাপ্তির আয়োজন।
জীবনের সমাপ্তি
গোলাপ মাহমুদ সৌরভ
একটা জীবন কতো রূপে রুপান্তরিত
কখনো অবুঝ শিশু হয়ে হামাগুঁড়ি
কখনো নাবালক থেকে সাবালক
আবার কখনো উপযুক্ত পরিপূর্ণ যুবক।
কখনো বয়সের বাড়ে দেহ নুয়ে বৃদ্ধ
সব ফুরিয়ে যখন অস্তিত্ব হারিয়ে যায়
তখনই মূল্যহীন জীবনের সমাপ্তি ঘটে
সময়ের পরিক্রমা বদলে যায় দিন
মানুষ ভুলে যার কারো অস্তিত্বের কথা
কখন যৌবন এলো আবার হারিয়ে গেলো
কিছু বুঝার আগেই বাধক্যের হাতছানি
রূপ,যৌবন, শক্তি সবই যেন পরিবর্তনশীল
তবুও স্বপ্ন, সুখ, শান্তি, দুঃখের মাঝেই জীবন।
খেলা হবে
শামীম শাহাবুদ্দীন
এবার খেলা ফেয়ার হবে
দুধের মতো সাদা
এই খেলাতে দু'চোখ বুজে
আস্থা রাখুন দাদা!
কিন্তু ন্যাড়ার বেলতলাতে
ভীষণরকম ভয়
দুই পিরিয়ড বেলের পতন
খুব সুখকর নয়।
রোজ বিড়ালে তওবা করে
আর খাবে না কাটা
মাছের ডেগেই মুখ দেবে সে
মারুক যতোই ঝাঁটা!
ঘরের মানুষ থাকলে জেগে
মুখ দেবে না ডেগে
লেজ গুটিয়ে খাদক বিড়াল
যাবেই যাবে ভেগে।
আমি ঋণী
আনজানা ডালিয়া
তোমার কাছে আমি ঋণী
ভীষন রকম ঋণী
শোধ হবেনা কোন দিনই।
আমার একলা থাকার পাশে
কষ্টগুলো উড়িয়ে দিও জলোচ্ছ্বাসে
একান্ত মনের কথা যাবে বাতাসে ভেসে।
তোমায় নিয়ে হারিয়ে যেতে নেই মানা
ঝুম বৃষ্টিতে দিবো ফুলের বাড়িতে হানা
ফুলের সুখে ভুল করেও নজর দিওনা।