যুগের কবিতা
❑
রাণী হওয়ার গল্প
আনজানা ডালিয়া
অস্থির গ্রহে ছিলো এক ঘুটে কুড়ুনির বাস
যেখানে ছিলো নিত্য রাগ,হিংসা,বিদ্বেষ
পান থেকে চুন খসলে হতো মহা অপদোষ।
ভুল করে পা বাড়িয়ে সে পৌঁছে যাদুর রাজ্যে
রাজা তাকে স্বাতগ জানায় তাঁর সাম্রাজ্যে
ঘুটে কুড়ুনিকে রাজা অদ্ভুত সন্মানে পুঁজে।
অস্থির জীবনে এখন স্বস্তির আবাস
নিত্য হাসি-আনন্দে চলে সুখের নিঃশ্বাস
কারো চৈত্র মাসে কারো মধুময় ফাগুন মাস।
❑
কিশোরী শেফালির বিয়ে
ইলিয়াছ হোসেন
শৈশব শেষে সবে শেফালি কৈশোরে দেয় পা
লতার মতো ওঠে বেড়ে লিকলিকে তার গা।
প্রতিদিন সে স্কুলে যেতে পরীর মতো সাজে
বান্ধবীর সাথে স্কুলে যায় আটটা যখন বাজে।
স্কুল থেকে বাড়ি ফিরে ছুটে বেড়ায় গাঁয়ে
দস্যিপনার অপরাধে বকুনি দেয় মায়ে।
বকুনি খেয়ে তবু তার মুখে থাকে হাসি
মাকে বলে গাঁয়ে ঘুরতে বড্ড ভালোবাসি।
দস্যিপনায় গাঁয়ের মানুষ নানান কথা কয়
তাদের কথায় বাবা মায়ের মনে কষ্ট হয়।
বাবা বলে এই মেয়ে ঘরে যাবে না রাখা
মা বলে মেয়ে ছাড়া কি ঘরে যাবে থাকা।
অর্থাভাবে তিন বেলা পেটে জোটে না খাবার
পাত্র দেখে বিয়ে দেই দরকার নেই স্কুলে যাবার।
একদিন সন্ধ্যায় আসে ঘটক সঙ্গে পাত্রের বাবা
শেফালিকে হাতছানি দেয় বিয়ের কালো থাবা।
শেফালি বলে বিয়ে নয় লেখাপড়া করবো
লেখাপড়া শিখে আমি সংসারের হাল ধরবো।
তবু বাবা জোর করে শেফালিকে দেয় বিয়ে
বরের সাথে যায় শেফালি মুখে ঘোমটা দিয়ে।
স্বামীর সংসারে সতত সে ব্যস্ত থাকে কাজে
সাজগোজ, দস্যিপনা থাকে না মনের মাঝে।
এমন করে বাবার ভুলে কিশোরী হয় বলি
ফোটার আগে ঝরে পড়ে শত ফুলের কলি।
❑
আক্রমণ ক্রসফায়ারের মতন
জাহাঙ্গীর চৌধুরী
তিরিশ লক্ষ ক্ষয়িত প্রাণের শোণিতে মুক্ত
এই ভূঁই আকাশ ভাস্কর সমীরণ।
অফুরান সুখ সম্ভারে তরঙ্গায়িত এখন,
তরঙ্গে বিরাজমান সামন্তচক্রের আচরণ।
শুভঙ্করের ফাঁক হেরি চলছে শকুনের আক্রমণ,
চারদিক থেকে ক্রসফায়ারে মতন।
এরা সাতান্নের লুটেরার সহোদর পাথুরে অন্তর,
আতঙ্কিত ভীষণ আঠারো কোটি মন।
এবার না হয় ছেড়ে দাওনা,
তমসা অয়নে হাঁটার চয়ন।
পাল্টিয়ে নিয়ন্ত্রণ নিজেকে কর অসাধারণ।
স্বস্তির মুক্ত সমীর টানুক আঠারো কোটি জীবন।
❑
শীত সজ্জা
রুশো আরভি নয়ন
হিমেল হাওয়া এল ছুটে বয়ে গেল সোনার গাঁয়,
ফোঁটা ফোঁটা শিশির বিন্দু ছুঁয়ে গেল তোমার পায়।
শুকনো পাতা গেল ঝরে ঝিকমিকিয়ে উঠল ঝিল,
পৌষ শীতের করুণ সুরে উড়ে গেল শঙ্খচিল।
সরষে ফুলের হলুদ আভায় ভরছে সকল মাঠঘাট,
ধানের গোলায় স্বপ্ন আজই সফল মনের সুখের হাট।
দিকভোলা ওই নয়া মাঝি ফিরল যখন তীরে,
নানা রঙের অচিন পাখি ফিরল সেথায় নীড়ে।
সারি সারি খেজুর গাছে মিষ্টি রসের হাঁড়ি,
পিঠাপুলির হিরিক জাগে গ্রাম বাংলার বাড়ি।
❑
চাঁদে যাই
মজনু মিয়া
অনেকে তো চাঁদে যায় চলো আমরা যাই,
চাঁদে যাওয়ার মজা আছে কোন বাঁধা নাই।
চাঁদে আছে এলিয়েন তারা অনেক কিছু জানে,
আমরা গিয়ে দেখব মজা তাদের কথা গানে।
চাঁদে গিয়ে ঘর বানিয়েই থাকব না হয়,
ঘুরে ঘুরে দেখব অনেক থাকবে না ভয়।
❑
চিরকাল জ্বর
এম.আর.এ. আকিব।
বেদনার নীল রঙে নিজেকে সাজিয়ে,
একাকী চলেছি আমি কত স্বপ্ন নিয়ে,
নেই কেউ পাশে মোর বিষণ্ণ বেলায়।
প্রচণ্ড জ্বরের ঘোরে আবুল-তাবুল
বলে যাই কত কিছু, ঝরে যায় ফুল,
তবু খোঁজে ফিরি আমি শুধুই তোমায়।
যদি তবু দেখা পাই এই অবেলায়,
কাছে এসে পাশে বসে হাতটা বাড়ায়,
জ্বরের ঘোরেও তবু পাবো যেন সুখ।
শীতল হাতের ছোঁয়া দেবে যে কপালে,
চোখে চোখ রাখো যদি খুব মায়াজালে,
নিমিষেই কমে যাবে সকল অসুখ।
তোমার পরশ যেন ওষুধ সমান,
হৃদয়ের ঘরে বাজে মিলনের গান,
আজও তো স্বপ্ন দেখি বাঁধবো যে ঘর।
অসুখ হলেই যদি তুমি ফিরে আসো,
কাছে এসে পাশে বসে যদি ভালোবাসো,
চাইবো তো থাক তবে চিরকাল জ্বর।
❑
নারীর কারণে
কাজী আলম ভূঁঞা
পৃথিবীর এই আলো দেখে নারীর কারণে,
অকালে সে পরপারে যায় নারীর কারণেই।
ছাত্র জীবন ও নষ্ট করেছে নারীর কারণে,
জীবন গড়ার পথ বেছে নেয় নারীর কারণেই।
জীবনটা হয় এলো-মেলো নারীর কারণে,
জীবন আবার গুছিয়ে তুলে নারীর কারণেই।
সুখের সংসার ধ্বংস করে নারীর কারণে,
দুঃখ ভুলে হাসি ফুটায় নারীর কারণেই।
দেশ ছাড়িয়ে বিদেশে যায় নারীর কারণে,
প্রবাস ছেড়ে সুখ ফিরে পায় নারীর কারণেই।
বন্ধু ও দেখি শত্রু হয় এই নারীর কারণে,
মিথ্যে মামলার ফাঁসি হয় নারীর কারণেই।
আদর্শ নারী হলে সুখ যে পাবে সবাই,
বিশ্বজয়ে ফুল ফুটাবে নারীর কারণেই।
❑
বুকের উঠোন জুড়েএবি ছিদ্দিক
চার বর্ণের মেলবন্ধনে সুনামির ঢেউ উঠলে
সন্তর্পণে অন্ধকার চলে যায় আলোর জলসায়
হৃদয়ের তস্তরিতে ফুটে রক্ত লাল স্টিকার
তোমার চিবুকের কোমল মাঠে শ্বাশত সুখ
সমূদয় আওয়াজে শোনায় যায় ভালোবাসার গান
চার বর্ণের ভালোবাসা খুঁজে পায় যৈবতী বসন্ত
বুকের উঠোন জুড়ে ভাসে লাল খয়েরি কামিজ
মনের ক্যানভাস জুড়ে তোমারই কোমল হাতছানি।
Tags:
কবিতা