যুগের কবিতা


 

যুগের কবিতা

এখনই সময়
নবী হোসেন নবীন

দিনক্ষণ পঞ্জিকা দেখে প্রেম হয় না
ভালোবাসার ব্যাকরণ মানে না
সময়ের শুভাশুভ ভাবনা।

আকাশ ছোঁয়ার স্বপ্ন নিয়ে মই খোঁজে যেa
গগনচুম্বী মই কোথায় পাবে সে?
ইচ্ছার ইন্ধনে এখনই তোমার
স্বপ্নডানা উড়াও আকাশে।

এখনই করো তা তোমার যা অভিপ্রায়
কাল ক্ষেপণ করে সময় করলে ক্ষয়
সময় তোমাকে একটুও দেবে না সময়।

যুদ্ধ জয়ের বাসনায়
যদি বসে থাক শুভ ক্ষণের আশায়a
শত্রু এসে কাল শিকল পরাবে তোমার দুপায়।

অতএব যা করার এখনই করো
সূচনা বাঁশি বাজিয়ে বেড়িয়ে পড়ো
সময় পেলে কাল একটু জিরিয়ে নিও।


নবান্ন উৎসব
আনজানা ডালিয়া

গোলা ভরে উঠলো ধানে
উৎসবের ঘটা হবে নবান্নে,
সাত পদ তরকারি,মাছ,দুধ,চিনি
সবুজ পাড়ের শাড়ি নেবে কিন্তু কিষাণী।
উৎসবে পিঠেপুলি চলবে নলেন গুড়ে
লক্ষী ঘুরবে তোমার আমার উঠোন জুড়ে,
ফুলের উঠোনে থাকবে পাক-পাখালির কলরব
রাই ক্ষেত সোনালী আভায় দুলবে,জমবে নবান্ন উৎসব।


অন্যায়ের প্রতিপক্ষ
কাজী আলম ভূঁঞা 

যথারীতি আছি আমি নিরপেক্ষ
        সকল অন্যায় কাজের প্রতিপক্ষ। 
যেখানে আছে অন্যায় অবিচার
        তার বিপক্ষে অবস্থান আমার।

যেখানেই থাকুক যত দুর্নীতি 
        তার বিপক্ষেই আমার রীতিনীতি।
যেখানে আছে ঘোষ বাণিজ্য 
        তার বিপক্ষেই আছি অনিবার্য।

যখনই দেখি আমি পা চাটার দল 
       তখনই ঘৃণায় চোখে আসে জল।
যখনই দেখি আমি প্রতারক
       তখনই তাদের করি আমি আটক।

যদি দেখি দালাল-বাটপার, 
      চটকনা দিতে ইচ্ছা হয় আমার। 
যদি দেখি চোর বা ডাকাত 
     দেখা মাত্রই আমি করি আঘাত। 

যখনই দেখি আমি সন্ত্রাস 
     গালে মারি আমি টাস টাস।
যেখানে আছে মিথ্যার ঝুড়ি 
     সততার মাধ্যমেই প্রতিহত করি।
  
  ❑ 
কবি হেবা কামাল আর নেই
            সাইদুল ইসলাম সাইদ 

ইহুদিরা মারছে বোমা, ঝরছে কত ফুল।
নিজের জায়গা দখলে, নিজের নাই কুল।
ঝরছে কত নারী শিশু, ঝরছে কত রবি।
চলে গেলেন মুসলিম, হেবা কামাল কবি।

ফিলিস্তিনের কবি সে, সাহিত্যের আলো। 
প্রতিবাদে কলম চলে, মুছে দেশের কালো। 
গল্প উপন্যাসে যে, পেলো কত ইনাম।
দেশ বিদেশ বাড়ে তার, কত শত সুনাম। 

কষ্টগুলো বুকে জমে, রক্ত হয়ে ঝরে।
স্বাধীনতা দাও প্রভু, ফিলিস্তিনে ঘরে।
আর যেন না ঝরে ফুল, অশ্রু নাই চোখে। 
বিজয় পতাকা উড়িয়ে, থাকবে মা'র বুকে।


রক্তাক্ত কফিনে ফিলিস্তিন
      রফিকুল ইসলাম 

বসতি ধ্বংসস্তূপের উপর দাঁড়িয়ে এক নারী 
বুকের পাঁজরে লালিত স্বপ্নের নির্জলা পরিহাস
নাকে বারুদের তীব্র গন্ধ, কাকে যেন খুঁজছে 
ফিলিস্তিন, রক্তপাতের নিদারুণ এক ইতিহাস।
পড়ে আছে রঙিন বল,পাশে ক্ষত বিক্ষত শিশু
কালের অবক্ষয় দেখছেন, খোদা ঈশ্বর যিশু। 
বোমার  স্পিলিন্টারে  এফোঁড় ওফোঁড় 
নিথর নিষ্পাপ শিশু পড়ে আছে, চৌচির মাথা
কূটনীতির আগুনে পুড়ে ছাই বৈশ্বিক মানবতা। 
জেরুজালেম পুড়ছে, পুড়ছে দাউদাউ ক্ষুধা 
দু'দিন আগেও শুধু, দু'টি রুটি ছিল সম্বল 
ছিল মাথার উপরে ছাদ —একটি আবাসস্থল। 
এখন বাস্তচ্যূত শরণার্থী, ভরসা একমাত্র প্রভু
বিবর্ণ প্রান্তরে খোলা আকাশ,আর উদ্বাস্ত তাঁবু। 
সকালের রোদ এখন শিশুদের সাথে খেলে না
শিশুরা আর ঘাস ফড়িংয়ের পিছু  ছুটে না
ধরে না,উড়ে যাওয়া প্রজাপতির রঙিন ডানা। 
বাতাসে ভাসে এখন বিষাক্ত ঝাঁঝালো ধোঁয়া,
অ্যাম্বুলেন্সের আওয়াজ, আহত শিশুর কাঁন্না।
দূর থেকে দেখে পরিত্যাক্ত ভেঙেপড়া বাড়ি 
খোঁজে বাদামি চোখ থিতু স্মৃতির বেসাতি,
আধমৃত বোধের মিনারে নীরব আহাজারি। 
ফিলিস্তিনিরাও কাঁদতে জানে, আছ মৃত্যু ভয়, 
এ কোন মহামারি রোগ নয়,
বেওয়ারিশ মাতালের মানবতাহীন নগ্ন অধ্যায়।
দ্রোহের আগুনে পোড়া পাথরে লেগে আছে 
আত্মবিশ্বাসী অবিনাশী সংগ্রামী প্রত্যয়, 
নষ্ট ইতিহাসে গড়া মানচিত্রের হবেই বিজয়।
ওহে ইহুদীরা শুনো, শুনে রাখো তুমি 
আহত শিশুর রক্তের ছাপে লাল পাথর স্বাক্ষী 
এই ফিলিস্তিন করবে জয় স্বাধীন জন্মভূমি...


আমার দেশ
মজনু মিয়া 

আমাদের এই দেশটা আহা সবুজ শ্যামল কত!
মিলেমিশে ঘুরাঘুরি চলাচল হয় শত।
নদী জলে মাছে ভরা গাছ ফুল ফল সব,
শিশুদের কোলাহল আর পাখিদের কলরব। 
সুরে সুরে গান গেয়ে ঐ উড়ে বনে বনে,
রোদ মেঘের খেলা ক্ষণে ক্ষণে দূর কাশবনে।
পাল তুলা নৌকায় মাঝি গায় ভাটিয়ালি গান, 
চারদিকে হইচই হুল্লোড় সুমধুর কলতান।
নীল আকাশের বুকে মেঘের ভেলা ভেসে যায়, 
অবারিত বাংলা সবুজ বুক জুড়ে মন হারায়।
এই দেশে জন্মেছি এই দেশ আমরা ভালোবাসি, 
গর্বে বাঁচি, সুখেদুখে করি হাসাহাসি। 


আজ নবান্নে
নাসরীন খান 

আজ নবান্নে সেজেছ কি তুমি কৃষাণী 
হাতে মেহেদী, আলতায় পা?
তোমার উঠোনে এখন নাচে না ঢেঁকি
তবুও আসে নবান্ন পিঠে- পুলিতে।

নতুন ধানের গন্ধ ঠিক তেমনি আছে 
তবে নেই অন্যসব।

চোখে কাজল আঁক না এখন আর
ব্রুপেনের আঁচড়ে বদলাও তোমাকে, 
কুপিতে  ধৈর্য্য ধরে কাজল পাতা!
সেসব হারিয়ে গেছে কালের গর্ভে 
তবুও চলে পিঠে উৎসব। 

ঢেঁকির শব্দে মুখরিত রাত গুলোয়
উৎসবের গভীরতা ছিল খাঁটি 
কুঁপির ঢিমঢিমে আলোয় তোমাকে 
অনেক সুন্দর আর স্নিগ্ধ দেখাত
সেইতো ভালো ছিল আলো আঁধারিতে
আজ বিজলির  আলোয় সব ফিকে 
তেমনি তোমার বানানো নকশি পিঠেও
আমি ভালোবাসি পুরনো সেই তুমিকে
যতই সাজাও আর আধুনিক কর তোমাকে।

নরপিশাচ
জিৎ মন্ডল 

পৃষ্ঠাদেশে বইছে রক্তের গঙ্গা 
হৃদয়ে ফুটেছে ব্যাথার জবা,
আঘাতে আঘাতে ঝরেছে অশ্রু 
তবু থামিনি হায়েনার থাবা।

হায়রে নির্বোধ নরপিশাচ 
দেখলিনা অন্তর চক্ষু মেলে,
সবিতো দেখিছে আরশের মালিক 
ভাবিছে আপন খেয়ালে। 

হয়তো ওই আঘাতের ঋণ
শুধিতে হইবে তোর,
 অনন্ত ব্যাথার আঁধার ভিড়িবে 
জাগিবেনা সুখের ভোর।

যে চোখে ভাসে কবিতার ছন্দ 
সে চোখে অশ্রু ভরা,
কবিতারাও আজ কাঁদিছে দিবানিশি 
কাঁদিছে বসুন্ধরা।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)
নবীনতর পূর্বতন

তানকা/স্বপন শর্মা