যুগের কবিতা




 ❑ শনিবার  ❑ ১৮ নভেম্বর ২০২৩ ইংরেজি  ❑ ০১লা অগ্রহায়ণ ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

যুগের কবিতা

স্বপ্ন থাকুক রামধনুতে
আনজানা ডালিয়া

গত জন্মের ঋন শোধ করবো
সব শুধরে নিবো
দিতে পারিনি তত
ভুল করেছি যত,
তোমায় আড্ডায় বসিয়ে শপিং মলে ঘুরবোনা
ঘুম পাড়িয়ে লুকিয়ে আনার কলি খু্ঁজবোনা।
জানতাম প্রায়শ্চিত্ত শেষে কাছে আসবে
ঠিক আগের মতই ভালোবাসবে।
স্বপ্ন নিয়ে থেকো রামধনু কিনারায়
এতোদিন ছুটেছি মিছে,পিছু আলেয়ায়।


বেঁধে রাখে পূর্ণতায়
-সোহাগ রেজা

কোন কথাগুলো তোমার অনেক প্রিয়;
কোন কথাগুলোতে ভীষণ ভাবে খুশি হও?
কোন কথাগুলো তোমাকে বেশ কষ্ট দেয়;
কোন কথাগুলো নিভৃতে মেনে নিতে চাও?
তা আজও জানা হলো না আমার !

যদি জানাতে; তাহলে চেষ্টা করতাম-
তোমার মনটাকে খুশিতে ভরিয়ে রাখতে!
হয়তো সব পাওয়ার সম্ভাবনা নেই;
তবে অকৃত্রিম ভালোবাসার যোগ্যতা আছে!
এটা অদৃশ্য; তাই বিশ্বাস করবে না জানি!

তোমার চোখের বিমোহিত ভাষা-
আমাকে বেঁধে রাখে পূর্ণতায়!
তোমার শূন্যতা আমাকে ব্যথিত করে!
তোমার নিত্য উপস্থিতি আমাকে সচল রাখে;
তোমার অনুপ্রেরণা আমাকে খুব কাছে ডাকে!
আমি তোমার অভিমানী হৃদয় গহীনে-
বেহালার আবেগি সুর হয়েই থাকতে চাই!
কি রাখবে তো?


হেমন্ত আসে সন্ন্যাসী ধ্যানে 
   রফিকুল ইসলাম

নিঃসঙ্গ সাধনায় শান্ত সৌম্ম হেমন্ত দুপুর
সবুজের আয়ু ছিঁড়ে বাজে ঝরাপাতার নূপুর। 
সন্ন্যাসী ধ্যানে সাধে, উত্তরের বায়ুর বিষণ্নতা
পথে পথে হলুদ পাতার ঘরছাড়া আকুলতা। 
আহা-রে হেমন্ত 
কৃষাণীর নোলকের মতো নুঁয়েছে ধানের শিষে 
ভরা ফসলের মাঠ এনেছে কার্তিকের শেষে। 
অরণ্যের মাদকতা ফেলে নিয়ে গেছে অভিমান
ছাতিমের উদ্দাম গন্ধ ভুলে রেখে গেছে অবদান। 
ফসল কাটা হলে সারা উৎসবে মাতে গাঁও পাড়া 
নির্জন মাঠে, শিশিরে ভিজে, পড়ে আছে নাড়া। 
শালিকের ঠোঁট খোঁজে ঝরাধান,উদাস করে প্রাণ 
বিরান মাঠে বাতাসে ভাসে এখনো ফসলের ঘ্রাণ। 
আহা! এমনি হেমন্ত আসে 
একলা ঘরেফেরা আলতো শীতের সন্ধ্যা রাতে 
কখনও হেঁটে যাওয়া শিশির ভেজা ধূলিপথে, 
নবান্নের উৎসবে,নগ্ন বুকের উপর হিম মধ্যরাতে 
অঘ্রাণের সোহাগ নামে কুয়াশার শুভ্র শাড়িতে। 
মাকড়সার জাল,ঘাসের শিশির চুমা দেয় রোদে 
শীর্ণাজলে দাড়কিনা মাছ ডাকে আমার কৈশরে 
জলসিঞ্চনে একা দাঁড় কাক দাঁড়িয়ে বিলের বাঁকে 
সন্ধ্যার ডাকে বিকেলটা ধীরে, হয়ে আসে ফিকে।


ক্রুশবিদ্ধ
রুশো আরভি নয়ন

তুমি চাইলে তোমার অঙ্গীকারের আঘাতে আমায় প্রত্যাখ্যান করতে পারো কিংবা সভ্যতার প্রাচীর গুড়িয়ে বলতে পারো ভালোবাসি। যে ভালোবাসার আঁতুড়ঘরে ভূমিষ্ট হয়েছিল অবিশ্বাস। যে ভালোবাসার দুর্গম পথে হেটেছিল মুসাফির।

তুমি চাইলে তোমার বারুদ ঠাসা দুটি চোখে আমায় খুন করতে পারো কিংবা তীব্র মায়ায় আগলে রাখতে পারো তোমার বুকের খাঁচায়। যে খাঁচায় স্থান পেয়েছিল কিছু ফ্যাকাসে অনুভূতি। যে খাঁচার দেয়ালে নিরসে জমে ছিল ধুলোর আস্তরণ।

তুমি চাইলে তোমার লাজুক চলনে আমায় ক্রুশবিদ্ধ করতে পারো কিংবা নির্দ্বিধায় ভেসে যেতে পারো মহা প্রলয়ের সীমারেখায়। যে সীমারেখার কাঁটাতারে বিধে ছিল ধূর্ত মোহিনী। যে সীমারেখায় প্রবাহিত হয়েছিল সরাবের তটিনী।

তুমি চাইলে তোমার বিতৃষ্ণ অধরে আমায় ছিন্নভিন্ন করতে পারো কিংবা প্রবল বেগে ছুঁয়ে দেখতে পারো চোরাবালিতে ডুবে যাওয়া আমার অম্বর। যে অম্বরের ফোঁটায় ফোঁটায় জন্মেছিল আদি প্রেমের নির্যাস। যে অম্বরের গভীরে প্রথিত হয়েছিল নগ্নবীজ।


বিশ্বাসের শিকলে বাঁধা
শারমিন নাহার ঝর্ণা 

মনের আঙিনায় রঙিন স্বপ্ন আঁকি
বিশ্বাসের শিকলে তোমায় বেঁধে রাখি,
সময় অসময়ে অনুভূতি করি ভাগাভাগি
মধুর সুরে সুরে হয় কিছু রাগারাগি।

মেঘলা দিনে যেন পরে রোদের ঝলক
মাঝে মাঝেই দেখি ও চোখে মায়ার পলক,
ঐ চোখে অপলকে দেখি আমি ভরসার ছায়া
নিত্যদিন তাই বুঝি বেড়ে যায় অথৈ মায়া।

হৃদয় পর্বতে মৃদু মৃদু শীতল ঢেউ আসে
সুখেরা হামাগুড়ি দিয়ে মিটিমিটি হাসে, 
যুগে যুগে এমন করেই ধরে রেখো হাত, 
এই বন্ধন বিশ্বাসের শিকলে বাঁধা থাক।


গাঁয়ের হেমন্ত
ইলিয়াছ হোসেন

হেমন্তের সকালে গাঁয়ের রাস্তাঘাট ফসলের মাঠ-
সবুজ অরণ্যে দেখা যায় আবছা কুয়াশা
মৃদু শীত সতেজ করে শরতের তপ্ত দেহ ও মন
পুবের রবির আলোয় ঝলমল করে সবুজ ঘাসের
শুভ্র শিশির কণা,
ক্ষেতের পাকা আমন ধান কৃষকের মুখে ফুটায় হাসি

ঘরে ঘরে শুরু হয় নতুন চালের পিঠাপুলির উৎসব।
গ্রাম্য পণ্য নিয়ে মাঠে বসে গ্রামীণ ঐতিহ্য গ্রাম্য মেলা
বাচ্চারা বাঁশি বাঁজিয়ে নাগরদোলায় চড়ে হয় উল্লসিত
পুষ্পবনে শোভা পায় সুরভিত শিউলি কামিনী মল্লিকা-
গন্ধরাজ ছাতিম ফুল যা মনকে করে বিভোর,
একসময় টাটকা শাক সবজি নিয়ে আগমন ঘটে শীতের
শীতকে অভ্যর্থনা জানিয়ে গাঁ থেকে বিদায় নেয় হেমন্ত।

আজান
নাসরীন খান 

আহ্বান এর দ্যুতি ছড়াচ্ছে 
আকাশ বাতাস আলোকিত করে
ভোরের উদীপ্ত মহিমায়। 

কল্যাণের জন্য এসো
সকল সৌন্দর্য যাঁর সৃষ্টি 
আল্লাহ মহান একচ্ছত্র আধিপতি।

নিজেকে সমর্পিত করো
নিজেকে ক্ষুদ্র করো আরও ক্ষুদ্র 
বিলীন কর তাঁর সন্তুষ্টিতে।

আহ্বান এতো সুমধুর 
আহ্বান হয় এত কোমল
আহ্বান হয় চির কল্যাণের জন্য।


পরম সুন্দর
নবী হোসেন নবীন

একটি সুন্দর বৃত্ত হতে আরও সুন্দর
আর একটি বৃত্ত আঁকা যায় না।
একটি গোলাপ হতে অধিক কোমল
আর একটি গোলাপ বৃন্তে ফুটে না।

চাঁদের স্নিগ্ধতা ছুঁয়েছে যে
সেই বোঝে জোছনা কতটা নরম।
আকাশের নীলিমা হতে অধিক নীলিম
আর কী আছে পরম?

চোখের জানালায় মনান্তরে দেখেছে যে
মনের আয়না
সেই বোঝে নদীর সুরতে নারী হতে সুন্দর
আর কিছু হয় না।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)
নবীনতর পূর্বতন

তানকা/স্বপন শর্মা