যুগের ছড়া
❑
কাল বৈশাখীর ঝড়
লুৎফুর রহমান চৌধুরী
আমার অনেক স্বপ্ন ছিল
ওগো তোমায় নিয়ে,
কাল বৈশাখী ঝড় এসে আজ
গেলো ভেঙে দিয়ে।
বুকের মাঝে রেখে ছিলাম
বড়ই আদর করে,
প্রাণ পাখিটা উড়ে গেলো
অনেক দূরে সরে।
ললাটে ঘাম জমে আজও
বৃষ্টি হয়ে পড়ে,
বাতাসেরই একটু ছোঁয়ায়
শুধু নড়ে-চড়ে।
কাজল মাখা চোখে তোমায়
লাগে ভীষণ ভালো,
ঘাসের উপর পায়ের চাপে
জ্বলছে যেন আলো।
লাল রঙের ঐ শাড়ি পড়ে
কোথায় তুমি যাও,
তোমার জন্য বসে আছি
নদীর জলে নাও।
মধুর চেয়ে মিষ্টি ছিলো
তোমার মুখের হাসি,
সেই হাসিটা আমার কাছে
আজ বেদনার বাঁশি।
❑
সাক্ষী বিশ্বময়
মোঃ সৈয়দুল ইসলাম
একাত্তরের পঁচিশে মার্চ
বর্বর পাকিস্তানি,
বাঙালিদের ইজ্জত নিয়ে
করে টানাটানি।
বাঙালিরা বীরের জাতি
নিতে প্রতিশোধ,
দেশমাতৃকার মান রাখিতে
গড়ে প্রতিরোধ।
হাসিমুখে মরতে রাজি
শির উঁচিয়ে বলে,
দেশের জন্য যুদ্ধ করতে
বীরের বেশে চলে।
দীর্ঘ নয়মাস যুদ্ধ করে
তাইতো বীরের দল,
পাকিস্তানি শত্রুসেনার
ভাঙে মনোবল।
লক্ষ প্রাণের বিনিময়ে
ছিনিয়ে আনলো বিজয়,
পেলাম একটা স্বাধীন রাষ্ট্র
সাক্ষী বিশ্বময়।
❑
ঠিকানা
শাহীন খান
আমার ঠিকানা পুঁইয়ের লতায়
কোলাহল আর নিরবতায়
শর্ষে ফুলে ফুলে
পাবে তুমি ঝিঙে মাচায়
বন্দি জীবন পাখির খাঁচায়
ইশকুলে ইশকুলে।
সন্ধ্যা তারায় জোছনা রাতে
খোকা যখন খেলায় মাতে
রাখাল বাজায় বাঁশি
ঝিলিমিলি রোদের মাঝে
সকাল দুপুর কিংবা সাঁঝে
ফিরে আসি ফিরে আসি।
পাবে আমায় ছড়া গানে
বৃষ্টি খরা ঝড় তুফানে
ঝরণা খালে ডোবায়
বাংলা ভাষায়, স্বাধীনতায়
থাকি মায়ের মিঠে কথায়
লাল সবুজের শোভায়।
থাকি আমি বন্ধু প্রেমে
বাঁধা আছি মায়ার ফ্রেমে
ঝিঁঝির পালা সুরে
আমায় পাবে হাসির ছটায়
নাহি পাবে দুর্ঘটনায়
থাকি দূরে দূরে।
গরীব দুখির হৃদয় জুড়ে
আছি স্বর্ণ কহিনূরে
টেকনাফ- তেঁতুলিয়ায়
পদ্মা মেঘনা যমুনায় আছি
আছি বুকের কাছাকাছি
আছি হিয়ায় হিয়ায়।
আমায় পাবে বাংলাদেশে
বাতাস হয়ে যাইরে ভেসে
কই যে কথা কানে
মাটি নদী আকাশ নীলে
দিঘি পুকুর এবং ঝিলে
আছি প্রাণে প্রাণে।
❑
রক্তের বাঁধন
এম. আবু বকর সিদ্দিক
কণা কণা বালু মিলে নদী কিংবা সাগর জলে
গড়ে বিশাল চর,
ভাইয়ে ভাইয়ে অবিরত মিলে থাকিস ওদের মত
করিস না রে পর।
ওই চেয়ে দেখ বাঁশবাগানে কঞ্চিগুলো নাড়ির টানে
ধরে পরস্পর,
ঝড় বাতাসে ধাক্কা মেরে ভেঙ্গে দিতে পারে নারে
ওদের শক্ত ঘর।
আকাশ এখন আছে ভালো হঠাৎ যখন হবে কালো
আসবে ভীষণ ঝড়,
ভাইকে যদি রাখিস পাশে বিপদ যাবে অনায়াসে
রাখিস মনে ডর।
ক্ষমা এবং ত্যাগ বিহনে ঐক্য হয়না কারো সনে
উদার করিস মন,
আপন স্বার্থ বিলীন করে রক্তের বাঁধন রাখিস ধরে
ভাই অমূল্য ধন।
❑
অসমাপ্ত স্বপ্নের নাবিক
গোলাপ মাহমুদ সৌরভ
প্রদীপের আলোতে তোমায় খুঁজি নিতো
আলেয়ার পিছনে ডেকে রাখিনি চেহারা
সাহস রেখেছি বুকে কখনো হইনি ভীত
তবে কেন আজ বিষন্ন মন সাথী হারা।
তোমার রূপের যৌবনে আমি সুখ খুজিনি
মনের সঙ্গে প্রেমালাপ হয়েছিল সেদিন
মিথ্যে আবেগে আমি তোমাতে জড়াইনি
একসাথে চলার প্রত্যয় ছিলো বহুদিন।
ভালোবাসার গল্পে মিথ্যে অভিনয় করে
অসমাপ্ত স্বপ্নের নাবিক হতে চাইনি,
ইচ্ছে ছিল হাসি আনন্দের জীবন গড়ে
বড় আপসোস সেই সময়টুকু পাইনি।
বিস্মিত হই আজ তোমার কথা ভেবে
কতটা বদলে গেছো নিজের প্রয়োজনে
পৃথিবীটা গোল তবে একদিন দেখা হবে
অনাকাঙ্ক্ষিত চলার পথে দু'জনে।
❑
বেস্টু তুমি
মোঃ দিদারুল ইসলাম
বেস্টু তুমি, দুষ্টু তুমি
করো লুকোচুরি,
তোমায় বিনে আমি যেন
সুতা কাটা ঘুড়ি।
তোমায় পেয়ে আমি খুশি
কাটাই সারা প্রহর,
পাখি হওয়ার ইচ্ছে জাগে
হতে দেশান্তর।
চলো চলো দু'হাত ধরে
করি ছোটাছুটি,
হেসে খেলে এই ধরণীর
আনন্দ সব লুটি।
আমি সদা পাগল-পারা
তোমায় ভালোবাসি,
আচ্ছা বেস্টু, আমায় পেয়ে
তুমিও কি খুশি?
❑
ডিসেম্বর
মাহবুব-এ-খোদা
ডিসেম্বরে ঘটেছিলো
বিজয়ের হাসি,
স্তব্ধ হলো পাকসেনা
আশা হলো বাসি।
বাঙালিরা গর্জে ওঠে
স্বাধীনতা লাভে,
শকুনেরা দেশ ছাড়ে
লাঠিভাঙা ঠাবে।
পৈশাচিক মনোভাবে
শাস্তি পেল সব,
এইমাসে বাংলা জয়
করি অনুভব।
❑
মা'র মতো হয় না
মজনু মিয়া
কোথায় আছি কেমন আছি কেউ রাখে না খোঁজ
কাজের ফাঁকে মায়ের মনে হয় না কোনো বোঝ!
না দেখে তাই সন্তান মায়ে ডাকাডাকি করে
কই গেলি তুই, বাড়ি আয় রে দেখছি না যে তোরে?
তবু যদি না ফিরে ঘর এ বাড়ি সে বাড়ি
খুঁজে দেখে সন্তান কোথায় বাঁধন যে মা'র নাড়ি!
খুঁজে এনে স্নান করিয়ে আদরে খেতে দেয়
ভুল পথে সে যায় কিনা তার টুকিটাকি খুঁজ নেয়।
খাইয়ে দেয় নিজের হাতে আর ভালো মন্দ বোঝায়
কারো সাথে ঝগড়া বিবাদ হয় না যেন কোথায়!
পারলে কাউকে দু'হাত দিয়ে সাহায্যটা করবে
সত্য ন্যায়ের জন্য পারলে বুক চিতিয়ে লড়বে।
পড়াশোনা করতে হবে মানুষ হতে ভালো
ভালো মানুষ জ্বালতে পারে দেশ সমাজের আলো।
কালি ও কলম
কনক কুমার প্রামানিক
কালি কলম মেধা মনন
সুশিক্ষার ধারক,
মূল্যবান বেজায় সেসব
শিক্ষার প্রচারক।
বইপত্র ও কালি কলম
শিক্ষা জাগায় প্রাণে,
শিক্ষা জাতীর মেরুদন্ড
অকৃত্রিম জ্ঞানে।
জাতীর বিবেক গড়ে ওঠে
কালি কলমের জোরে,
মনের আঁধার কেটে যায়
আলো আসার পরে।
❑
অপেক্ষায় বৃষ্টি
বাপী নাগ
কবে যে অঝরে ঝরবে তুমি
অপেক্ষায় রয়েছি।
তোমার পরশ গায়ে মাখবো
কত আশা করেছি।
বৃষ্টি তোমার অপেক্ষায় যায়
শুকিয়ে গাছপালা।
বর্ষার অতি ঘন বৃষ্টিতে হয়
কান যে ঝালাপালা।
অতি রোদের তাপে প্রাণ যে
হাঁপিয়ে ওঠে আজ।
বৃষ্টি তোমার অপেক্ষায় বসে
আছি নেই যে কাজ।
পদঘাট নদী-নালা গেছে যে
শুকিয়ে তোমার জন্য।
গাছপালা জীবজন্তুর সবাই
তুমি নেই সব যে শূন্য।
বৃষ্টি এলে আমি ভিজতে চাই
হাতে নিতে চাই জল।
আজ মেঘ করেছে বৃষ্টি হবে
মাঠে যে এবার চল।
❑
খুকু যাবে নানার বাড়ি
জাহাঙ্গীর চৌধুরী
খুকু যাবে নানার বাড়ি
শীতের পিঠা খেতে।
হৈমন্তিক রূপ দেখবে পথে
হেঁটে যেতে যেতে।
শেয়াল ডাকে সন্ধ্যার পরে
রাস্তার বাঁকে বাঁকে।
যাবে না সে একা একা
সঙ্গে নিবে কাকে ?
খোকা যাবে খুখুর সাথে
গল্প করে করে।
পথে শুনলে নবান্নের গান
ক্লান্তি যাবে সরে।
নানা-নানি দেখবে যখন
তুলে নিবে বুকে।
খোকাখুকু নাচবে তখন
মনের মহা সুখে।
নানি রাঁধবে সকাল বেলায়
খেজুর রসের পায়েস।
থাকবে বিশেষ পিঠাপুলি
খেয়ে করবে আয়েস।।
❑
শীতের সকাল
সাইদুল ইসলাম সাইদ
সকালবেলা ঠান্ডা পরে
টিনের চালে হিম,
সারা নিশি খোকাখুকু
ঘুমিয়ে করে ঝিম।
গোলাপ,হেনা ঘোমটা খুলে
শীত সকালে ফোটে,
ফুলের সুবাস নিতে খোকা
ঝিমিয়ে ঝিমিয়ে ছুটে।
শীতের কালে মায়ের জ্বালা
ভোরবেলাতে উঠে,
রান্না-বান্না করে মায়ে
তবেই অন্ন জুটে।
পূব আকাশে সূর্য হাসে
শিশির ঝরে পরে,
ফুলে ফুলে মধু নিতে
ভ্রমর গুনগুন করে।
সকালবেলা ভীষণ মিষ্টি
সূর্য মামার তাপ।
দুপুরবেলা গা পোড়ে যায়
ওরে বাপরে বাপ!