যুগের কবিতা

 


❑ শনিবার  ❑ ০২ ডিসেম্বর ২০২৩ ইংরেজি  ❑ ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

যুগের কবিতা

বাবা তুমি কই!

জিৎ মন্ডল

আমার সমগ্র  অস্তিত্ব জুড়ে
একটাই ধ্বণি প্রতিধ্বনিত হয়
বাবা, তুমি কই!
আমার হৃদয়ের আঙিনায়
একটাই ধ্বনি সুরভি বিলায়
বাবা, তুমি কই!
ঝর্ণার মতো গতিময়
নুপুরের মতো ছন্দময়
মেঘের মতো উদাসিন সেই ধ্বনি
বাবা,তুমি কই!
আকাশ ভরা জ্যোৎস্নার সাথে
ধরনীর মিতালি যেমন
তেমনি ওই একটাই ধ্বণি
সুধা ঢালে নিশিদিন প্রতিদিন
আমার ক্লান্তিময় তৃষিত হৃদয়ে।


সুখের অতিশয় অভিমান

ইলিয়াছ হোসেন

বিরামহীন স্বপ্ন দেখি একদিন সুখী হবো
বরাবরই সুখ থেকে যায় অধরা,
তাইতো ফিকে হয়ে আসে সুখী হওয়ার স্বপ্ন
নৈঃশব্দ্য ঘিরে ধরে আমাকে
হারিয়ে ফেলি এগিয়ে চলার গতিপথ।

অবাক চোখে তাকিয়ে থাকি ঐ দূর নীলিমায়
হয়ত সেখানে একাকি খেলা করে সুখ,
বাস্তবতা মেনে নেই যাপিত জীবনে
অতৃপ্ত মনে সান্ত্বনা খুঁজি এই ভেবে
সুখের অতিশয় অভিমান।


আজও শুনি গুলির আওয়াজ

   রফিকুল ইসলাম

একাত্তুর ; এই তো মাত্র সেদিনের কথা
ঘরেঘরে অগ্নিসংযোগ নৃশংস হত্যা, লুটতরাজ
বোমা আর মেশিনগানের কান ফাঁটা আওয়াজ।
ভীত সন্ত্রস্ত মানুষের দিগ্বিদিক ছুঁটাছুটি
নিজ গৃহে নেই, নিরাপদ আশ্রয়ের নিশ্চয়তা।
নয় মাস, অতঃপর স্বাধীনতা ;
ভাবনাহীন দুরন্ত কৈশর, যতদূর চোখ যাই
সব আমার পরম স্বাধীনতা—
ধূলো উড়া মাটির পথ,গাছে গাছে পাখির বাসা
বিন্যাস্ত স্মৃতির দর্পণে ভেসে ওঠে  কত কথা,
রাফখাতার  উপরে লেখা– ১৯৭৬ সাল
মাধ্যমিক স্কুল, সবে মাত্র আয়ুর সকাল।
এখন অফিসে বসে লিখছি ২০২৩ সাল
ভাবছি– পিছনে ফেলে এসেছি কতটা কাল।
আজও আগুন দেখি,দুর্নীতি আর লুটতরাজ
পথে হাঁটে হতাশায় দক্ষ তরুণ যুবক —
ন্যায্য দাবীর মিছিলে রক্তাক্ত শ্রমিকে লাশ।
অর্ধশতাব্দীর দিনলিপিতে নৈরাজ্য হিংশ্রতা
অধিকারের দেয়ালে লোহার পেরেক ঠোকা
আজও ধর্ষিত হয় আমার কাঙ্ক্ষিত স্বাধীনতা।


নক্ষত্র উজ্জ্বল

আনজানা ডালিয়া

চোখের তারায় খুঁজি কিছু
খুঁজি চাঁদের উজ্জ্বলতা
কি গো?
তোমার চোখের তারায়
শত সখীর আনাগোনা।
বসতি হলো উচ্ছেদ
প্রেমের হলো নিলাম।
নিঃসীম শূন্যে
চাঁদটা নিজ রূপ হারিয়ে
ঢলে পরে নীল ঢঙ্গে।
অস্তিত্ব গোপন হলেও
নক্ষত্র কিন্তু উজ্জ্বল।


জীবনের তাগিদে

কাজী নাজরিন

জীবনের তাগিদে, জীবিকার অন্বেষনে চব্বিশ বছর ধরে তুমি আছো দূরে
এই চব্বিশ বছরে আমার জীবনে বসন্ত এসেছে মাত্র আটটি বার!
তিন বছরের অপেক্ষার পর মাত্র ত্রিশ দিনের জন্য তোমাকে কাছে পাই,

ছুটি শেষে বিদেশ পাড়ি দেয়া মুহুর্ত গুলো আমাকে কুঁকড়ে কুঁকড়ে খায়।
আমার হৃদয় র*ক্তাক্ত হয়ে পড়ে, মান অভিমান মুহূর্তের মধ্যে খসে পড়ে।
কার সাথে অভিমান করবো, বলতে পারো?
তুমি ছাড়া জীবনে সব দায়িত্বের বোঝা বইতে বইতে আমি কাতর, বড্ড বেশি কাতর।
জানো তো, তুমি ছাড়া জীবনে যে কারো অসুস্থতায় আমাকে সবাই পেয়ে বসে,

পর*কীয়া নামক গ্লানি টানতে হবে বলে আমার বাবার বাড়িতে যাওয়া বারণ।
বাবার বাড়ি কিংবা যেকোনো আয়োজনে আমাকে আর মানায় না
কারণ তুমি দূরে,,
অসুস্থ শশুর বাবার দেখাশোনার দায়িত্ব শুধুই আমার কারণ তুমি পাশে নেই
শাশুড়ী মায়ের নির্ভরতার জায়গা আমি,,
আমাদের বাচ্চাদের একমাত্র অবলম্বন এই আমি! 

জীবনে নিজের শখ আহলাদ বলে যে কিছু থাকে
সেটা আমি ভুলেই গেছি,
সেইসব নিয়ে আক্ষেপ করে কি লাভ, বলো?
তুমি ছাড়া জীবনে আমাকেই সবার কথা ভাবতে হয়, কিন্তু আমাকে নিয়ে ভাবার কেউ নেই,
নির্ঘুম রাত শেষে সবার ধারণা,
আমি দিব্যি নাকে তেল দিয়ে আরামে ঘুমাতে পারি,
তুমি ছাড়া আমার অমাবস্যার রাত কাটে সেটা ক'জন বুঝতে পারে, বলো?
জীবনের তাগিদে আমিও এখন একবুক কষ্ট নিয়ে মুখে হাসির আভা ফুটিয়ে ছুটে চলি,,


অযাচিত যোজন

নবী হোসেন নবীন

নারী যদি নদী হয়
নিদারুণ খরায় পুড়ে ফসলের মাঠ
নদী নারী হলে
চুকে যায় কবিতার পাঠ।
শ্রাবণে বসন্ত এলে
খরায় পুড়ে দারুচিনি দ্বীপ
ফাগুনে শ্রাবণ এলে
নিভে যায় কৃঞ্চচূড়ার দীপ।

কাক কোকিল হলে
থেমে যায় অর্ফিয়াসের বাঁশি
নিশুতির সূর্য নাশে চাঁদিমার হাসি।
পাথরে যদি ফুল ফুটে
কে আর ঠোঁট রাখে তার পাপড়ির ঠোঁটে।
মানুষ অমানুষ হলে
লোকালয়ে পশুরা করে বসবাস
মানুষের হয়ে যায় নির্জন বনবাস।


ফিরে চাই সোনালী দিনগুলো

শারমিন নাহার ঝর্ণা

মাঠ ভরা পাকা ধানে কৃষকের হাসি,
গোহাল ভরা গরুর পাল
খড়ের গন্ধমাখা পুরো আঙিনা,
পুকুরের পাড়ে কলমি লতা আর শামুকের ডিম।

ক্লান্ত দুপুরে চারআনা দিয়ে আইসক্রিম খাওয়া,
সনপাপরি মটকা এসব তো হতোই কেনা,
বাঘ বন্দী খেলা আর রাজা মন্ত্রী
খেলে শেওলা ভরা পুকুরে হত নাওয়া,
নাওয়া শেষে গরম ভাত হয়ে যেত পান্তা।

বেতের ঝারে বেতফল খোঁজা,
সাজনা গাছের আঠা দিয়ে রাজা ফড়িং ধরা,
বুনো আমরার খোঁজে আনাচে-কানাচে ঘোরা
বড়শি হাতে কস্তুরী ভরা পুকুরে একটি মাছের আশায় হন্যে হয়ে ঘুরে বেড়ানো।

বিলে বিলে ঘুরে শাপলা শালুকের খোঁজ,
শাপলা ফুলের মালা গেঁথে গলায় পরে বাড়ি ফেরা কাদা মাখা শরীরে রোজ।
পড়ন্ত বিকেলে সখীদের সাথে হরেক রকম খেলায় মাতামাতি,
বাবলার আঠা দিয়ে ঘুড়ি বানাতো দুষ্টু দামাল ছেলে আকাশে উড়তো নানা রঙের ঘুড়ি।

সাঁঝের বেলায় গরু বাঁধা থাকতো বাহির বাড়ি,
গরুর গায়ের দাস পোকা ধরা নিয়ে সে কি হুড়োহুড়ি।
আর রাতের বেলায় জোনাকি পোকার আলো,
দেখতে লাগতো কি যে ভালো।

পূর্ণিমা রাতে উঠোন ভরে বসতো
কিচ্ছা শোনার আসর,
কিচ্ছা শুনতে শুনতে ঘুমিয়ে যাওয়া
খেজুরের পাটির উপর।
সেই সরল দিনগুলি ফিরবে কি আর?
মনে পড়ে খুব কেন যে বার বার।


ভালোবাসার এপিঠ ওপিঠ
মমতা মজুমদার
জীবনের মুদ্রায়,

কিছু ভিন্নতা আছে বৈকি!
হৃদয়ের পরতে খচিত করা কিছু রঙ
আর এলোমেলো ইচ্ছেঘুড়ি;
বাসনার জলরঙে আঁকা যে প্রিয় ছবি
মুছে কী বলো ঋতুচক্রের মত ঘুরেফিরি!

ভালোবাসা বদলায়, রঙিন ডানায় চড়ি।
এ-প্রান্তে যাহা কিছু সুশ্রী, ও-প্রান্তে কেবলই
রাগ-রাগিণী
বৈপরীত্যে মন হয়ে ওঠে সুরেলা এক বাঁশরী।
কখনো দেখা মিলে ভালোবাসা হয় পরবাসী।
দখিনা বাতাসে উল্টে যায় হৃদয়ের পাতা;
দৃষ্টির সীমানায় দুটো আঁখির চাওয়া হয় যখনই।


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)
নবীনতর পূর্বতন

তানকা/স্বপন শর্মা