যুগের সাহিত্যের ছড়া ও কবিতা



যুগের সাহিত্যের ছড়া ও কবিতা

 

 স্বপ্নের মতো দেশ

সোমা মুৎসুদ্দী


কোন সে দেশের বুকে বলো স্বপ্ন থাকে আঁকা

প্রজাপতি উড়ে যেথায় ছড়িয়ে রঙিন পাখা।

নদীর বুকে ঢেউয়ের খেলা উছলে পড়ে রোজ

পাহাড় যেথা ফুল পাখিদের নিত্য রাখে খোঁজ। 

কোন দেশেতে সবুজ মাঠে ফসল হাসে সুখে

ফিরলো খোকা খেলা শেষে সাঁঝে মায়ের বুকে।

কোন দেশেতে পুকুর জলে হাঁসের ভেসে চলা

কলমিলতার ঘ্রাণের সাথে একটু কথা বলা। 

কোন দেশেতে মাঝির গানে নৌকা চলে সারি

মন্ডা মিঠাই সাথে নিয়ে মামা আসে বাড়ি।

কোন দেশটা বীর শহীদের রক্ত  দিয়ে মাখা

বাংলাদেশই সে দেশ শোন স্বপ্ন দিয়ে আঁকা।





কানামাছি 

সোমা মুৎসুদ্দী


আয় খেলি কানামাছি 

নদীর ঐ তীরে।

স্মৃতিগুলো নিয়ে আসি

খেলার ঐ ভীরে।


গাঁয়ের দিঘিতে আজ

শাপলারা দোলে

মনটা আকুল হয়ে

সেই ফুল তোলে।


কোথায় সে দিনগুলো 

খুঁজে ফিরি হায়।

মনটা কিশোরী হয়ে

স্মৃতি ফিরে চায়।







নানান রঙের পরি

সোমা মুৎসুদ্দী


ফুলপরি আর জলপরিটা

নামলো দীঘির জলে।

খিলখিলিয়ে হেসে হেসে

নানান কথা বলে।


তাইনা দেখে লালপরিটা

আসলো নীলের সাথে। 

স্নানটা সেরে গল্প কথায়

ওরা সবাই মাতে।


মনপরিটা ওদের নিয়ে 

লিখছে মজার ছড়া।

ভাবনাপরি ভাবছে শুধু 

ছেড়েই এসব পড়া।


সাদাপরি  আসলো আবার

আজকে সবার মাঝে।

কাব্য ছড়ায় গান কবিতায় 

নানান রঙে সাজে।



সন্মান 

ফেরদৌসী খানম রীনা


অন্যের জন্য নিজের জীবন

করো বিসর্জন,

তবেই করবে এই জীবনে

সব সুনাম অর্জন।


ভালোবাসা, সম্মান পাওয়া 

মোটেও সহজ নয়,

নিজের কর্ম গুণ দিয়ে তাই

অর্জন  করতে হয়।


জীবন যদি সৎ পথে রোজ

চলাতে পারো ভাই

সুখও সন্মান আসবে দুটোই

বিকল্প তার নাই।



বিজয়ের গান গাও 

জাহাঙ্গীর চৌধুরী 


সোনামণি তোমরা যদি 

গল্প শুনতে চাও।

আমার সাথে স্বাধীনতার 

বিজয়ের গান গাও।


একাত্তরের ডিসেম্বরের

ষোল তারিখ বিজয়। 

নয়মাসের এ যুদ্ধে হলো 

ত্রিশ লক্ষ লোক ক্ষয়।


হায়েনার দল গেল শেষে 

হাত উপরে তুলি।

স্বাধীন দেশের মানুষ হয়ে 

বুক ফুলিয়ে চলি।


জাতির জনক বঙ্গবন্ধু 

ছিলেন সেরা এক বীর। 

কালজয়ী এ মহাপুরুষ 

নত করে নাই শির।।


খুকির ইচ্ছে

ইলিয়াছ হোসেন


রাত পোহালে খুকির মনে

বড্ড ইচ্ছে জাগে,

ফুলের শোভা দেখতে খুকি

যাবে ফুলের বাগে।


মিঠেল রোদে ঘাসের শিশির

ঝলমল করবে যখন,

শুভ্র শিশির দেখে খুকির

চোখ জুড়াবে তখন।


পাখপাখালির মধুর বুলি

শুনবে হৃদয় ভরে,

উল্লসিত হবে খুকি

রঙিন ফড়িং ধরে।


বিলের ঝিলের পদ্ম শাপলা

ডাকবে কাছে আয়,

বলবে খুকি জলের ভেতর

যেতে দিবে না মা’য়।


রবির উত্তাপ বাড়লে খুকি

আসবে ঘরে ফিরে,

ঘরের সকল বিড়াল ছানা

ধরবে তাকে ঘিরে।


জাগরণে স্বদেশ 

নাসরীন খান 


হাসনাহেনা হিম যুথিকা

প্লাবন নামে বন বীথিকা

মায়া কানন স্বপ্নীল শাখা 

রঙিন ভূবণ মন পাখা।

কাশফুল বাতাস কাপন

সবুজ শ্যামল স্বপ্ন কানন

ঢেউ দোলায় মাতাল সাগর 

থৈথৈ খেলে ভাটির হাওর। 

শাপলা শালুক ঝিল বিল

হাঁস পাখালি খিলখিল 

মনের রঙধনুতে নানান রং

জাগল মুখোশে বৈশাখী সং।

ফাগুন ডাকে আগুন জ্বেলে

রং মিতালি ডাঙায় খেলে

নয়ন জুড়োয় প্রাণ প্রিয়াতে

মন মাতায় জোনাক রাতে।



শীত এসেছে 

জাহাঙ্গীর চৌধুরী 


শীত এসেছে শহর গাঁয়ে 

লাগছে ভীষণ গায়ে। 

কাঁপছে সবাই থরথর করে 

জুতা ছাড়া পায়ে। 


অবুঝ শিশু মাথা গুঁজে 

মায়ের বুকের ভিতর। 

উদাম দেহে রাখলে শিশু 

গতর যে হয় নিথর। 


সন্ধ্যা হলে লেপের তলে

ঢুকে সবাই গিয়ে। 

খাবার দাবার যাকিছু খায়

থালা হাতে নিয়ে।


মিষ্টি রোদে দারুণ মজা 

শীতের পিঠা খেতে। 

কষ্ট লাগে সবার মনে 

গোসল করতে যেতে।



বিজয়

মোঃ দিদারুল ইসলাম 


বিজয়, বিজয়

নাই কোনো ভয়

গাই জনে জনে,

বিজয়ের মাস

করি উল্লাস

পুলকিত মনে।


এদেশের তরে

জান বাজি ধরে

খেটেছেন রণে,

ভুলিবার নয়

তাঁরা অক্ষয়

অম্লান মনে।


বাংলাদেশের 

লাল সবুজের 

শোভিত নিশান,

পৎ পৎ উড়ে 

আছে মন জুড়ে

করি সম্মান।


আমরা স্বাধীন আমরা মুক্ত

সাঈদুর রহমান লিটন 


আমার আকাশ খোলামেলা 

মুক্তমনে চলি

মনে ভেতর স্বপ্ন গুলো 

সকলকে যাই বলি।


চলার পথে নাইকো বাঁধা

পাখির মতো ছুটি

ছন্দ তালে চলতে চলতে

সব পাখিরা জুটি।


এই আকাশটা স্বাধীন বলে

ইচ্ছে মতো ঘুরি

আমার মতো এমন সুখী 

নেই কোথাও জুড়ি।


আমরা স্বাধীন আমরা মুক্ত

চলি ডানা মেলে

সারাটাদিন কাটাই এখন

নানান খেলা খেলে।


এই আকাশে নাইকো কারো

চলার পথে কাঁটা,

ইচ্ছে হলেই দিতে পারি

চতুর্দিকে হাঁটা।


সেই স্বাধীনতা

বিজুরী ইসলাম


শতাব্দীর এই চাওয়া মোদের

প্রিয় স্বাধীনতা,

শেখ মুজিবের ডাকে পেলাম

দেশের মুক্তি গাঁথা।


স্বাধীনতা মোর হৃদয় মাঝে 

রাখবো যতন করে,

শতাব্দীর পর শতাব্দী এই

জাতি রাখবে ধরে।


ছিলাম মোরা পরাধীন জাত

বিশ্বের মাঝে সত্যি, 

ত্রিশ লক্ষ বীর জীবন দিলো 

কুণ্ঠা নাই এক রত্তি।


জনম জনম আকাঙ্খা এই

স্বাধীনতার জন্য, 

মায়ের বোনের উৎসর্গ তাই

বিশ্বমাঝে ধন্য।


লক্ষ কোটি বাঙালির মান 

বাঙালির মনোবল, 

হাজারো ত্যাগ তিতিক্ষাতে

স্বাধীনতা সম্বল। 


স্বাধীনতা  সোনার বাংলার

শ্যামলী মায়ার বন, 

লাল সবুজ পতাকা আমার 

আঁচল ভরা ধন।


আমরা শিশু 

মোঃ দিদারুল ইসলাম 


আমরা শিশু, আমরা কাঁচা 

আমরা স্বপ্নে ঠাসা,

আমরা গড়ব সোনার বাংলা 

আমরা দেশের আশা।


আমরা ছোট, আমরা পাখি

আমরা গগন টুটি,

আমরা করব বিশ্ব বিজয়

আমরা ভালো জুটি।


আমরা নবীন, আমরা সবুজ 

আমরা নাহি টলি,

আমরা হবো দেশের সেবক

আমরা ফুলের কলি।


আমরা আকাশ, আমরা তারা

আমরা সুখে উড়ি,

আমরা কাড়ব সবার নজর 

আমরা রঙিন ঘুড়ি।


শূন্য তাহার ঝুড়ি 

লুৎফুর রহমান চৌধুরী


যেই ঘরটা আজ নিয়ে চলছে

এতো বাড়াবাড়ি,

সেই ঘরটা তাই নয় যে কোনো

ঐ পুরাতন শাড়ি।


হাতের ব্যাগের মধ্যে নেই যে

কোনো টাকা কড়ি,

শীতের কাপড় নয় আজ গায়ে

যাচ্ছে ঠাণ্ডায় মরি

 

সামনে দিয়ে চলে যাচ্ছে

নতুন একটা গাড়ি,

আমার জন্য অপেক্ষা হায়

কাঠের লম্বা খাঁড়ি।


গানের পালা দেখতে সবাই

যাচ্ছে তাড়াতাড়ি,

সেথায় গিয়ে লোকে দেখে

করছে মারামারি। 


আসল হিসাব রেখে করছে

কাদা ছোড়াছুড়ি,

শেষের দিকে এসে দেখে

শূন্য তাহার ঝুড়ি।


বিজয় বিজয়

জান্নাত মিমি


বিজয় বিজয় বলছে ডেকে

সকালবেলার পাখি

লাল সবুজের নতুন সকাল

খুলে দিল আঁখি।


বিজয় বিজয় খুশির হিরিক

বাংলার ঘরে ঘরে

রক্তে ভেজা বিজয় পেলাম

ষোলোই ডিসেম্বরে।


বিজয় বিজয় স্বাধীন দেশে

মুক্ত হাওয়ায় ভাসি

বিজয় বিজয় ছোট শিশুর

মুখের অবুঝ হাসি।


বিজয় বিজয় আনতে বিজয়

শহিদ হলেন যারা

বাংলাদেশের ইতিহাসে 

চির অম্লান তারা।


শহীদ জননী

   জিৎ মন্ডল


মাগো তোমার নয়ন কেন

করছে টলোমল,

আঁচল দিয়ে মুছে ফেলো

তোমার চোখের জল।


তোমার চোখে অশ্রু নয় মা

রাখো অগ্নি  জ্বেলে,

বুকের মানিক যুদ্ধে পাঠাও

স্নেহের বাঁধন খুলে।


যুদ্ধে গেলে তোমার ছেলের

শহীদ হওয়ার ভয়?

বীরের বেসে তোমার ছেলেই

যুদ্ধ করবে জয়।


কভু যদি তোমার ছেলের

জীবন চলে যায়,

মরেও সে অমর রবে

এই সোনার বাংলায়।



 কবিতা অংশ

মায়াবতী 

শারমিন নাহার ঝর্ণা


কোন এক বসন্তের পরন্ত বিকেল 

সূর্যর্টা আহ্লাদে ঢলে পড়েছে পশ্চিমাকাশে, 

মাঝে মাঝে কোকিলের কহুতান

একজোড়া আঁখি চেয়ে আছে অপলক

অমন করে কি দেখছো মায়াবতী?

নয়নে যে অথৈই মায়ার সমুদ্র-

রাশি রাশি ঢেউ খেলে 

দেখছি মন ভরে কূল কিনারা কোথায়।


নক্ষত্রের পিছে দৌড়ে কি

কেউ নক্ষত্র গুনতে পেরেছে মায়াবতী? 

আকাশটা সুন্দর সীমাহীন বলে

জানিনা তোমার প্রতি এত টান কিসের

বৃথা আশায় কেন মায়ার আয়োজন? 

অপেক্ষায় রইবো ঐ নয়নে আবার -

আসুক বসন্তের ঢেউ ফুটুক কৃষ্ণচূড়া,

কিছু বৃথা অপেক্ষায় হয়তো অন্তহীন সুখ ভরা।



শেষ চিঠি জাদুঘরে

নবী হোসেন নবীন


চোখের কাজলে লেখা তব শেষ চিঠি

রেখেছি যতন করে হৃদয়ের জাদুঘরে

দেখে যেতে পার এসে দর্শকের বেশে।


অতীতের পুরাকৃতি জাদুঘরে নিষ্প্রাণ

অন্তরালে কথা বলে জীবাশ্মের প্রাণ।

ফসিলের কান্না শোনে কাঁদে না কেউ জাদুঘরে এসে

তুমিও চলে যেও চিঠি পড়া শেষে।


যাবার বেলায় যদি ভিজে যায় চোখের কাজল

নীরবে ফেলে যেও দুফোটা চোখের জল।

কাজল কালিতে লেখা চিঠির কথা

নোনা জলে মুছে যাক শব্দের শিকলে বাঁধা

হৃদয়ে লুকানো ব্যথা।



বটবৃক্ষ

আনজানা ডালিয়া


বটবৃক্ষ

এক আশ্রয় কেন্দ্র

ঝড়,ঝাপটা যাই আসুক তাঁর বুকে দাঁড়াই

ছায়া শীতলতা খুঁজে নিতেও বটের তলা।

আমরা মানুষগুলো বড্ড অকৃতজ্ঞ

সুযোগ গেলেই পেরেক ঠুকি,

কোন প্রয়োজন নেই তবু ডাল ভাঙ্গি।

আমারও কিন্তু নিজস্ব একটা বটবৃক্ষ আছে

আমি আঘাত করিনা,

পেরেক ঠুকে খোঁচাইনা,

ভালোবাসি বটবৃক্ষ।

হে সমাজ যে যার বটবৃক্ষকে ভালোবাসো।


বৃষ্টি নামে

শাহীন খান


বৃষ্টি নামে মিষ্টি করে আজ

বৃষ্টি জলে স্নান করেছে ফুল

কবি সাহেব কাব্যেতে মশগুল 

শুয়ে থাকি ফেলে সকল কাজ। 


মেঘমালারা দাপিয়ে বেড়ায় কি যে

বাজ পড়েছে দূরের কোন গাঁয়

শীতল হাওয়ায় লাগছে সারা গায়

পথিক সকল বৃষ্টিতে যাই ভিজে। 


ভাল্লাগে না আজকে যেন কিছু

এ মন আমার যায় হারিয়ে যায় 

ভাবতে থাকি নিঝুম নিরালায়

লিখছি ছড়া বড্ড কিছু-মিছু। 

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)
নবীনতর পূর্বতন

তানকা/স্বপন শর্মা